Home রাজনীতি মহাসচিবের নির্দেশনায় এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার নিয়ে যশোরে জাপায় ক্ষোভ

মহাসচিবের নির্দেশনায় এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার নিয়ে যশোরে জাপায় ক্ষোভ

35

নির্দেশের কথা স্বীকার করলেন চুন্নু

স্টাফ রিপোটার: পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলি চেয়ে ইসিতে আবেদনের কয়েকঘন্টা পর দলের মহাসচিবের নির্দেশে সেই আবেদন প্রত্যাহার করেছেন যশোরের জাতীয় পার্টির ৬ সংসদ সদস্য প্রার্থী।

বৃহস্পতিবার সকালে ইসিতে আবেদন করলেও বিকেলে তা প্রত্যাহার করে ওই প্রার্থীরা বলছেন, মহাসচিবের নির্দেশেই আমরা অভিযোগ প্রত্যাহার করেছি।

বিষয়টি জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু স্বীকারও করেছেন। মহসচিবের এমন নির্দেশনায় দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আবেদনকারীরা হচ্ছেন যশোর-১ আসনের সদস্য প্রার্থী আখতারুজ্জামান, যশোর-২ আসনের ফিরোজ শাহ, যশোর-৩ আসনের মাহবুব আলম, যশোর-৪ জহুরুল হক, যশোর-৫ আসনের এম এ হালিম ও যশোর ৬ আসনের জি এম হাসান।

সকালে ইসি সচিবালয়ে দেয়া আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যশোরে প্রায় তিন বছর কর্মরত আছেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুর বাড়ি মনিরামপুরে। তিনি যশোর-৫ মনিরামপুরের সংসদ সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের ‘জামাই’ হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। স্বপন ভট্টাচার্য এবারো একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এসপি স্বপন ভট্টাচার্যের পক্ষে কাজ করছেন। তাই, তাকে বদলি করা না হলে যশোরে বিশেষ করে মনিরামপুর আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। মনিরামপুরে শ্বশুরবাড়ি ছাড়াও প্রায় তিন বছর যশোরে থাকায় অনেকের সঙ্গে তার রয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন।

আবেদনে আরো বলা হয়, সম্প্রতি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার নিয়মিত পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হয়েছেন। সাধারণত নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা পূর্ব পদে কর্মরত থাকেন না। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যেন জয়ী হতে না পারে সেজন্য জাতীয় পার্টিসহ বেশিরভাগ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে।

তাই মনিরামপুরসহ যশোরের অন্যান্য আসনে ভোটারদের শঙ্কামুক্ত রেখে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এসপিকে বদলি চেয়েছেন তারা।

ইসিতে আবেদন জমা দেয়ার পর যশোর-৫ মনিরামপুর আসনের প্রার্থী এম এ হালিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যশোরের অন্যান্য আসনের থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যা মনিরামপুরে। কারণ, এখানে এসপির শ্বশুরবাড়ি। নৌকার প্রার্থী এসপির শ্বশুর হিসেবে পরিচিত। নৌকার লোকজন ছাড়া মনিরামপুরে আর কেউ মাঠে নামতে পারছেন না। ইতিমধ্যে এসপি মনিরামপুর থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের তিনি স্বপন ভট্টাচার্যের পক্ষে কাজ করা নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, আবেদনের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে ‘বিশেষ কারণ দেখিয়ে’ প্রত্যাহারের জন্য ফের আবেদন জমা দেন জাপার এই ৬ প্রার্থী। পরে তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে এসপির ‘সমঝোতা’ হয়েছে। এসপি সাহেব মহাসচিবকে বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এরপর স্যারের নির্দেশে আমরা অভিযোগ প্রত্যাহার করেছি। ১৭ ডিসেম্বর এসপি আমাদের সঙ্গে বসবেন।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু যুগবার্তাকে বলেন, যশোরের এসপির সঙ্গে আমার কোন সমঝোতা হয়নি। তবে, আমি আমার দলীয় নেতাদের অনুরোধ করেছি ছোট খাট বিষয় হলে অভিযোগ না করার জন্য।
আবেদনকারীরা প্রকাশ্য কিছু না বললেও দলের মহাসচিবের নির্দেশে অভিযোগ প্রত্যাহারের পর যশোরের জাপা নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূলের এসব নেতাকর্মীরা মহাসচিব এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। একদিকে দলে পদ হারানো আর অন্যদিকে এসপির ভয়ে তারা নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। তারা বলছেন, এ দলের সাথে থাকাটা কঠিন।

এদিকে, গত ৮ ডিসেম্বর এসপিকে বদলি চেয়ে আবেদন করেছিলেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জি এম মজিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি গৌর কুমার ঘোষ, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সুব্রত ব্যানার্জি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।