আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। আবারো প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন বরিস জনসন, সে দৌড়ে ছিলেন পেনি মর্ডান্টও। কিন্তু তারা দু’জনেই রণেভঙ্গ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে এগিয়ে গেলেন ঋষি সুনক। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই তরুণ হচ্ছে আগামী দিনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১০ নভেম্বর তিনি প্রবেশ করবেন ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে। তবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর মকুট পরার সাথে সাথে তাকে দেশটির ত্রিমুখী সমস্যাও কাঁধে নিতে। চরম মন্দা আসন্ন এই দেশটির মানুষের ক্ষুধামুক্ত জীবনের দায়িত্বও তাকে নিতে হলো। ঋষি অব্শ্য ইতোমধ্যেই বলেছেন,“আমাদের দেশ গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। যথাযথ মনোনিবেশ, পেশাদারিত্ব এবং দায়বদ্ধতা দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করব। আমাদের অর্থনীতিকে সংহত করব, আমাদের দলকে সঙ্ঘবদ্ধ করব এবং দেশের ভালো করব। আপনাদের সমর্থন চাই।’’
ব্রিটেনের জনতার প্রতিনিধি কনজারভেটিভ দলের সাংসদরা ইতোমধ্যেই তাকে সে সমর্থন দিয়েছেন। সব নিয়ম শেষে নতুন রাজার হাতে শপথ গ্রহণ করা ঋষির জন্য এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ২৮ অক্টোবর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন ঋষি সুনক বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে শপথ নিবেন। ৪২ বছর বয়সী এই তরুণ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করবেন আগামী ১০ নভেম্বর। ব্রিটেনের ২০০ বছরের ইতিহাসে তিনিই হবেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। বরিসের পদত্যাগের পরে লিজ ট্রাস-এর সাথে তিনিও লড়ছেন। কিন্তু দলীয় এমপিদের সমর্থনের অভাবে সেযাত্রায় এগোতে পারেননি সুনক। কিন্তু সরকারের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে মতদ্বৈধতা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করায় ভাগ্য খুলে ঋষি সুনকের। দলীয় সাংসদদের বিপুল সমর্থন অর্জন করে অপ্রতিহত গতিতে দলের নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি নিশ্চিত করেন জনসন আমলের অর্থমন্ত্রী সুনক। হাউস অব কমন্সে কনজারভেটিভ দলের ৩৫৭ জন সদস্যের অর্ধেকেরও বেশি তাকে সমর্থন করেন। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনায় ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছুটি-সফর কাটছাঁট করে দ্রুত লন্ডনে ফিরেও ন্যূনতম ১০০ জন সাংসদের সমর্থন জোগাতে ব্যর্থ হন বরিস জনসন। অবশেষে তিনি রণে ভঙ্গ দেন। অপরদিকে সুনকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে লড়তে চেয়েছিলেন প্রাক্তন ক্যাবিনেট মন্ত্রী তথা হাউস অব কমন্সের নেত্রী পেনি মর্ডান্টও। বিস্তর চেষ্টা চালিয়েও প্রয়োজনীয় ১০০ জন দলীয় সাংসদের সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি তিনি। একেবারে শেষমুহূর্তে তিনিও সুনককে সমর্থন দিয়ে লড়াই থেকে সরে যান মর্ডান্ট। তারপরেই সুনকের সামনে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার নিষ্কন্টক হয়ে যায়।
তবে ঋষি সুনকের চেয়ার নিষ্কন্টক হলেও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেরবার দেশটির নয়া প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের পথ আদৌ কুসুমাস্তীর্ণ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, ত্রিমুখী সমস্যার মুকুট পরেই তিনি ১০, ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করতে চলেছেন। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অধোগতি, উচ্চহারের মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজেট ঘাটতির গেরোয় আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। অক্টোবরেই অর্থনীতির সঙ্কোচন ঘটেছে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। ব্রিটেন ইতিমধ্যেই মন্দায় পড়ে গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সুনকের পূর্বসূরি তথা বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ঘোষিত বরাদ্দহীন কর ছাড়ের সিদ্ধান্তে বিশ্ববাজারে পাউন্ডের মান এবং সরকারি বন্ডের মূল্য কমে যায়। দেশ সম্পর্কে বিশ্ববাজারের আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুতের মহার্ঘ বিলের জ্বালা থেকে দেশবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার দায়ও থেকে যাচ্ছে ভারতীয় এই বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই। তার মেয়ে অক্ষতা সুনকের স্ত্রী। সাউদাম্পটনে থাকত তার পরিবার। ১৯৮০ সালের ১২ মে সেখানেই ঋষির জন্ম। আফ্রিকান হিন্দু পঞ্জাবি পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। হ্যাম্পশায়ার ও উইনচেস্টার কলেজে স্কুল জীবন শেষে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক হন তিনি। পরে ২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেন ঋষি। সেখানেই স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে তার আলাপ হয়। ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে অক্ষতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ঋষি। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ঋষি। সে বছর রিচমন্ড থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের বিত্তবানদের মধ্যে অন্যতম ঋষি। তার সম্পত্তির পরিমাণ জানলে চোখ কপালে উঠবে! সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ঋষি ও তার স্ত্রীর অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার টাকা। মধ্য লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে ঋষির। একাধিক সুযোগসুবিধা রয়েছে সেই বাড়িতে। জানা গেছে, সুনকের বাড়িতে রয়েছে পাঁচটি বেডরুম। এছাড়াও রয়েছে চারটি স্নানঘর। রয়েছে বিশাল বাগানও। ঋষির এই বিলাসবহুল বাড়ির দামও আকাশছোঁয়া। যে বাড়িটি প্রায় ৪২ কোটি টাকা দামে কিনেছিলেন ঋষি-অক্ষতা। বর্তমানে এই বাড়ির দাম ৬৫ কোটি টাকারও বেশি। লন্ডনের ওল্ড ব্রম্পটন রোডে দক্ষিণ কেনসিংটনে আরও একটি বাড়ি রয়েছে ঋষির। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এই বাড়িতে যান ঋষি ও অক্ষতা। এছাড়াও নর্থ ইয়র্কশায়ারে ঋষির খামারবাড়িও রয়েছে। এই বাড়িটিও অত্যন্ত বিলাসবহুল।