Home জাতীয় ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য বেড়েছে ডেমরায় নৈশ প্রহরী মাকসুদ এখন ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক।

ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য বেড়েছে ডেমরায় নৈশ প্রহরী মাকসুদ এখন ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক।

144

স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর ডেমরায় ভূয়া সাংবাদিকদের প্রতারণার জালে জনসাধারন অতিষ্ঠ। প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রত, বিপাকে প্রশাসন। ভুয়া সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিজেদেরকে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে নিরীহ লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিক পরিচয়ে এরা চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ভূয়া সাংবাদিকদের নানা অপকর্মের কারণে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাড়িয়েছে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য বিষয়টি লজ্জাকর হলেও ভূয়া সাংবাদিকরা ডেমরা এলাকাজুড়ে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের মতো বেশভূষায় সেজেগুজে একশ্রেণীর প্রতারক দলবেঁধে অলিগলি, কল-কারখানা ও হাট-বাজারে চষে বেড়াচ্ছেন। প্রকৃত ঘটনা কি-সে ঘটনার আদৌ কোনো নিউজ ভ্যাল্যু আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার সময়ই যেন নেই তাদের। পেটে বোমা ফাটালেও দু’ লাইন লেখার যোগ্যতাহীন টাউট বাটপারের দল চাঁদাবাজিতে সিদ্ধহস্ত। তাদের এই দলে রয়েছে নৈশ প্রহরী, টিভির মিস্ত্রি, মাছ বিক্রেতা, চা দোকানী এবং চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ভূয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এদেরই একজন মাকসুদুল আলম (রবি)। রাজধানীর ডেমরার বড়ভাংগার বাসিন্দা মৃত মোঃ শাহ আলম এর ছেলে মাকসুদুল আলম (রবি)। যিনি রাজধানীর ডেমরার বড়ভাংগা বাজারের প্রায় দুই বছর নৈশ প্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নৈশ প্রহরীর চাকরি ছেড়ে বনে গেছেন সাংবাদিক। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি হলেও তিনি এখন সি এন এম সংবাদ নামের একটি ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক। নৈশ প্রহরী চাকরি ছেড়ে ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই শুরু করেছেন মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইল। বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ বেলায়েত হোসেন খসরুর বিরুদ্ধে তার ম্যাগাজিনে তথ্য বিহীন সংবাদ ছাপাচ্ছেন একের পর এক। খসরু বলেন, মাকসুদ বড়ভাংগা বাজারের নৈশ প্রহরী থাকাকালীন সময় ঠিকমতো ডিউটি না করে মাদকসেবনে লিপ্ত থাকতো। অস্থায়ী কাঁচামালের দোকান থেকে শাক সবজি, তেল ও ফার্নিচার দোকানের কাঠ চুরি করে নিয়ে যেত। বিষয়টি জানাজানি হলে বাজার কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ীগণকে সাথে নিয়ে জিজ্ঞেস করলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেয় এবং পরবর্তীতে আমার বিরুদ্ধে লেখা লেখি শুরু করে।
গত জুন মাসে বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করায় তার কাছ থেকে একলক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে মান সম্মান ক্ষুন্ন করার হুমকি দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ওই মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, তথ্যবিহীন ও মনগড়া নিউজ ছাপেন তার ম্যাগাজিনে। আবার হুমকি দিয়ে আসেন চাঁদা না দিলে একের পর এক ধারাবাহিক নিউজ ছাপানো হবে।
বাইতুন নূর জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মফিজ মিয়া বলেন, আমাদের মসজিদের ইমামকে জরিয়ে যে নিউজ প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমরা মসজিদের মুসল্লিগণ ইমামের বিরুদ্ধে লেখা নিউজের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা এর সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাকসুদ বিজেএমসির অধীনে রংপুর জুট মিলে কেরানী পোস্টে মাস্টার রোলে চাকরি পান। একপর্যায় রংপুর জুট মিল থেকে পাট চুরির দায়ে চাকরিচ্যুত হন। সেখানে বসবাস কালীন সময়ে বাসার কাজের মেয়ের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ড করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েন। পরে স্থানিয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী তাদের বিয়ে করিয়ে দেন। সেই সংসারে বর্তমানে তাদের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপির ক্ষমতাকালীন সময়ে জাতীয়তাবাদী যুব দলের সারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১০নং ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে শুরু করেন চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মামলার ভয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরের রামগতিতে পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়েও বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে রামগতি থানায় একাধিক মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী। পরে গ্রামবাসীর তোপের মুখে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপরও থেমে নেই তার অপকর্ম। পরে ঢাকায় এসে ২০০৩ সালে সারুলিয়া ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে তার ছোট ভাই ফেরদৌস আলমের আইডি কার্ড ব্যাবহার করে ডাব মার্কায় নির্বাচন করে মাত্র ৭টি ভোট পান। ২০১৮ সালে সাইনবোর্ড ও শনির আখড়া এলাকায় নামসর্বস্ব মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে চাঁদার রশিদ ছাপিয়ে বাসাবাড়ি ও বাসে টাকা তোলতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে। পরে মুচলেকা দিয়ে ছুটে আসেন।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি তবে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিবো।
সাংবাদিকতার নাম ব্যাবহার করে যারা প্রতারণা করছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক এমনটাই দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল সাংবাদিকেরা।