Home জাতীয় ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’র ভেঙ্গে ফেলা তোরণ পুন:নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ

ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’র ভেঙ্গে ফেলা তোরণ পুন:নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ

51

আহমেদ জালাল : ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’র ভেঙ্গে ফেলা তোরণটি ৭ বছরেও পুন:নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা সৈনিকের পরিবার, ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন মহলে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব এর স্মৃতি রক্ষায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরে নির্মিত হয়েছিল ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’র তোরণটি। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের খোড়া অজুহাতে ২০১৫ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয় তোরণটি। একই সময় ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর ও শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন।
ভাষা সৈনিকের পরিবার ও ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কাজী গোলাম মাহবুবের নাম মুছে ফেলতে তোরণটি ভাঙ্গা হয়েছে। এবং ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে সুকান্ত বাবু অডিটোরিয়াম। তাঁরা অনতিবিলম্বে তোরণটি পুন:নির্মাণের দাবি জানান।
বরিশালের গৌরনদীর কৃতি সন্তান ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে গৌরনদী উপজেলা সদরে উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়কে ২০০২ সালে “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ” নির্মাণ করা হয়। এবং গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় চত্বরকে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর করা হয়। সেখানে একটি আধুনিক শহীদ মিনার নির্মাণ করে গৌরনদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে একুশ পালন করে আসছিল প্রশাসন।
গৌরনদী উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গৌরনদী উপজেলা চত্বরকে “ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্বান্তটি চিঠি দিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসককে প্রেরণ করেন। বরিশাল জেলা প্রশাসক স্মারক নং জেপ্র/বরি/১-২/২০০৭/১৫০ তারিখ ২৯/৩/২০০৭ এক চিঠিতে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-২ শাখা বিষয়টি গত ৮/৫/২০০৭ তারিখে অনুমোদন দেন (ম্মারক নং উপ-২/৬পি-২৩/২০০২/১৫২)। চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. তাহাবুব আলম স্বাক্ষর করেন।
ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের পরিবারের অভিযোগ, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পরে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরবর্তিতে কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর ও তোরণটি নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ২০১৫ সালে উন্নয়ন কাজের খোড়া অজুহাত দিয়ে তোরণ সম্পূর্ন ভেঙ্গে ফেলে গৌরনদী উপজেলার তৎকালীন প্রশাসন। ওই বছর স্থানীয় প্রশাসন কাজী গোলাম মাহবুব চত্তরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ওই চত্বরে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। একই বছর একুশ পালনে সরকারি গৌরনদী কলেজ শহীদ মিনারকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘোষণা করে সেখানে শহীদ দিবস পালন করা হয়। তার কয়েক মাস পরে বিলীনকৃত বা পরিত্যক্ত ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বরে সুকান্ত বাবু অডিটোরিয়াম নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করে তা বাস্তবায়ন করা হয়।
ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক, গৌরনদী বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম জহির জানান, ২০১৫ সালে ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণটি ভেঙ্গে ফেলা, চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিত্যক্ত ঘোষণ করার প্রতিবাদে স্মারকলিপিসহ কর্মসূচী গ্রহন করা হলে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ,এন,ও) মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী জানিয়েছিলেন উন্নয়ন কাজের নির্মাণ সামগ্রী আনা নেওয়ার সুবিধার্থে তোরণটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পরবর্তিতে তোরণটি পুনঃনির্মাণ করে দেয়া হবে।
ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ পুনর্নিমাণের জন্য তৎকালীন সময়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন ভাষাসৈনিকরা। যাতে ভেঙ্গে ফেলা তোরণটি আবার নির্মাণ করে আবার সেই সৈনিকের স্মৃতি রক্ষা করা যায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ভাষাসৈনিক জাতির গর্বিত সন্তান। তাঁদের অমর্যাদা পুরো জাতির জন্য অমর্যাদা ও লজ্জাজনক। এ ঘটনায় আমরা ব্যতীত ও মর্মাহত। অতিসত্বর গৌরনদী উপজেলা সদরে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর দাতা হলেন ভাষাসৈনিক সাবির আহমেদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, মির্জা মাজহারুল ইসলাম, শামসুল হুদা, ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু, অধ্যাপক মনোয়ার ইসলাম, অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুন, রেজাউল করিম ও আবদুল জলিল। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছিলেন, ভাষা সৈনিকেরা জাতির গর্বিত সন্তান। তাদের অমর্যাদা পুরো জাতির অমর্যদা ও লজ্জাজনক। এ ঘটনায় আমরা ব্যাথিত ও মর্মাহত। অতি সত্বর ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ নির্মাণ করা হোক। কিন্তু গত ৭ বছরেও প্রশাসন কোন ভূমিকা নেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের প্রবেশ মুখে কাজী গোলাম মাহবুব তোরণটি অপসারনের পর থেকে ফাঁকা রয়েছে। কাজী গোলাম মাহবুব বিলীনকৃত চত্বরে নির্মিত হয়েছে সুকান্ত বাবু অডিটোরিয়াম। এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের ফলকটি লাল রং দিয়ে মুছে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের স্ত্রী কাজী পিয়ারী মাহবুব অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে কাজী গোলাম মাহবুবের নাম মুছে ফেলতে তোরণটি ভাঙ্গা হয়েছে। চত্বর ও শহীদ মিনারকে পরিত্যক্ত ঘোষণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ,এন,ও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ২০১৫ সালের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ভাষা সৈনিকেরা জাতির গর্বিত সন্তান কোন মতেই তাদের অমর্যাদা হতে দেয়া যাবে না।