ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের রাজস্থানে মেয়েদের নিলামে তোলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ইস্যুতে রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করে তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি। রাজ্য সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

জানা গেছে, রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলায় দুই নাবালিকাকে ঋণ শোধের জন্য নিলামে তোলা হয়। তাদের মায়েরা এই ঘটনায় আপত্তি জানালে খাপ পঞ্চায়েতের নির্দেশে তাদেরও ধর্ষণ করানো হয়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন।

শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা বলেন, একটি টিম ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে। এর পাশাপাশি, ওই ঘটনায় সরকারের ভূমিকা কী হতে চলেছে, বা এতদিন তারা কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ কেন করেনি, তা জানতে কমিশনের চেয়ারপার্সন নিজে দেখা করবেন রাজস্থানের মুখ্যসচিব এবং ভিলওয়ারার পুলিশ সুপারের সঙ্গে।
চেয়ারপার্সন বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রাম এবং বসতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে খবর আসছিল। এমনও শুনছিলাম স্ট্যাম্প পেপারে দলিল সই করে নিলামে ওঠা মেয়েদের কিনছেন ক্রেতারা। তারপর তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌন পেশায় কাজে লাগানো হচ্ছে।’

রাজস্থানের মন্ত্রী প্রতাপ খাচারিয়াবাস ওই ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘ঘটনাটির কোনও প্রমাণ নেই। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। যদি এ ধরনের ঘটনা সত্যিই ঘটেছে বলে জানা যায়, তখন দেখা যাবে।’
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর এসেছে, আমরা একটি টিমকে কাজে লাগিয়েছি। পরিস্থিতি কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

এ সম্পর্কে শনিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. সাইফুল্লাহ রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘রাজস্থানে সংঘটিত যে ঘটনার কথা আজ আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারলাম তা অসহনীয়। এও সম্ভব! বিশেষত আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে। একটা সময় ছিল যখন আমরা এই ভারতবাসীরা আমাদের মা বোনোদের ব্যবহার করতাম যাচ্ছেতাই ভাবে-কখনো সতীত্বের রঙ মিশিয়ে তাদেরকে স্বামীর চিতায় তুলে দগ্ধ করতাম, কখনো বা একসঙ্গে একশত মেয়েকে বিয়ে করে ফুর্তি করতাম। কিন্তু সে তো অনেক দিন আগের কথা! তাহলে কি আমরা এতদিনে এতটুকুও অগ্রসর হতে পারিনি। না কি এটাই আমাদের প্রকৃত পরিচয়। তাই তো মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুরুষশাসিত সমাজের প্রভুরা নারীত্বের নামে যে গাওনা গাই তার সবই আসলে ভণ্ডামির অন্য নাম। আমাদের এই ভণ্ডামিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা। তা না হলে পঞ্চায়েতের প্ররোচনায় মেয়েদেরকে নিলামে তোলো হয় কীভাবে! এখন আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয় অতঃপর কী বলবেন; কী আইন প্রণয়ন করবেন! কী বললেন ওইসব মহাপুরুষরা, যারা মুসলমান সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে নিয়ত চিল চিৎকার করেন। এই পথে পদচারণা করে অবতার হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। এমন ঘটনা যদি আমাদের দেশে তো দূরের কথা অপর কোনো দেশেরও মুসলমান সমাজে ঘটতো এতক্ষণে তারা কী বাদর নাচটাই না নাচতে শুরু করতেন। হায় আমার ভারতবর্ষ। হায় আমার ভারতবর্ষের মা বোনেরা। তোমাদের সন্তানেরা তোমাদেরকে ভোগ্য সামগ্রীর অতিরিক্ত কিছু বলে মনে করে না। তোমরা শুধুই তাদের পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উপকরণ মাত্র।’

গণমাধ্যমে প্রকাশ- রাজস্থানে ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের নিলামে তোলা হচ্ছে। তাদেরকে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, মুম্বাই এমনকি বিদেশেও বিক্রি করা হচ্ছে। রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার পান্ডার গ্রামে এ সব কাজ করা হচ্ছে। যেখানে অনেক ছোট বসতিতে, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ঋণ পরিশোধের চাপে দালালের মাধ্যমে স্ট্যাম্প পেপারে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর এমপি রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন- ‘রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারের অধীনে বাজারে বোন-মেয়েদের বিক্রি করা হচ্ছে। রাজস্থানে এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে যে মেয়েদের কেনা-বেচা হচ্ছে! তাদের দাস বানানো হচ্ছে। যৌনদাসী বানানো হচ্ছে। আমরা আইএসআইএস এবং তালেবানের ভিতরে এমন কথা শুনেছি। কিন্তু এখন এতদূর যাওয়ার দরকার নেই।’

বিজেপি নেতা রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর বলেন- ‘যখন ৮/১০ বছর বয়সী ছোট মেয়েদের বিক্রি করা হয়, তাদের হরমোনের ইনজেকশন দেওয়া হয়, যাতে তারা দ্রুত বড় হয়। তারা কী পশু, তাদের পশুর মতো উপস্থাপন করা হচ্ছে? সরকার চুপ করে বসে আছে, কিন্তু এমন নয় যে তারা বিষয়টি জানে না। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ‘পসকো’ আইন জারি করা উচিত এবং প্রশাসনকে সতর্ক করা উচিত যে এই ধরনের কাজ যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়।’

রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর আরও বলেন, ‘রাজস্থানে অপহরণের ঘটনা বাড়ছে। প্রত্যেকদিন গড়ে ১৪টি শিশু নিখোঁজ হচ্ছে। রাজস্থানে এক মাসে ৪০০ মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। গোটা দেশের পরিসংখ্যানে রাজস্থানের নাম বেশ উপরে উঠছে। ধর্ষণে শীর্ষে রয়েছে রাজস্থান। এ ধরণের কাজকর্ম কিছুতেই সহ্য করা যায় না’ বলেও বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর এমপি মন্তব্য করেছেন।
আমাদের সময়.কম