Home সারাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের নাজির মোমিনুলকে চাঁদপুরে বদলী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের নাজির মোমিনুলকে চাঁদপুরে বদলী

41

আদালত বর্জনের মধ্যেই ২১ আসামী জামিনে মুক্ত, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দিদের শ্লোগান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ আইনজীবীদের আদালত বর্জনের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোঃ মোমিনুল ইসলামকে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। তার এই বদলীকে আইনজীবীরা তাদের আন্দোলনের সুফল হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, নাজিরের বদলীর মধ্যদিয়ে তাদের দাবীর একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। তবে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তার বলছেন, প্রশাসনিক কারণে তার বদলীর আদেশ হয়েছে। বুধবার প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে নাজির মোঃ মোমিনুল ইসলামকে বদলী করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। একই আদেশে চাঁদপুর আদালতের নাজির মোঃ ছানাউল্যা তালুকদারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বদলি করা হয়েছে।

এদিকে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করায় সে আদালতের কোন বিচারিক কাজেই অংশ নেননি আইনজীবীরা। তবে আদালতের একটি সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবী ছাড়া বিচার প্রার্থীদের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত থেকে ২১জন আসামী জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৫জন শিশু রয়েছে। বিষয়টিকে আইনজীবীরা আইনসম্মত নয় উল্লেখ করলেও আদালতের দাবী আইনসম্মত দিক বিবেচনা করেই জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট তানভীর ভূইয়া জানান, বিচার প্রার্থীরা ইচ্ছে করলে নিজের মামলা নিজে মুভ করতে পারেন। কিন্তু বেইলবন্ড ছাড়া হাকিম রিলিজের অর্ডার দিতে পারেনা। বেইলবন্ড ছাড়া হাকিম কিভাবে রিলিজ অর্ডার দেয়। এটা আইন সম্মত নয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য না শুনে বিচারক জামিন দিতে পারে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পেশকার এবং পিয়নরা আইনজীবীদের পাশ কাটিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব জামিন করিয়ে দিচ্ছেন। নাজিরের অপসারণে আমাদের একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। আইনমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির আলোকে এখন ওই দুই বিচারকের অপসারণ হলেই আমাদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে। এখন আইনমন্ত্রীর সাথে বসার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দাবী থেকে আমরা সরে আসব না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হলে তখন বেইলবন্ড দাখিলের শর্তপূরণ করতে হয়। যখন পক্ষ নিজেই আসে তখন তার পক্ষে এসব শর্ত প্রযোজ্য নয়। সাদা কাগজের উপর সরকারি স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি লাগিয়ে জমা দিলে বিচারকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জামিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এখানে লেনদেনের কোন প্রশ্নই আসে না। প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে বুধবার সন্ধ্যায় নাজির মোমিনুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আদালত বর্জন করে আসছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ^াসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শুরু করে আইনজীবীরা। তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচীর শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষনা দেয় আইনজীবীরা। তবে বুধবার আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের বদলীর আদেশ হওয়ায় আইনজীবীদের মাঝে উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রাখায় দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচার প্রার্থীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছেন কারাবন্দিরা। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে ও হাজতখানায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কারাবন্দি নিয়ে একটি প্রিজনভ্যান জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ফটকে যান। কারাবন্দিরা ভ্যান থেকে নামার সময় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাজতখানায় প্রবেশ করান। হাজতেও তারা স্লোগান দিতে থাকেন।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী কানন বলেন, এটি পেশকারদের উসকানি। তারাই কারাবন্দিদের উত্তেজিত করেছে।
তবে একাধিক পেশকার বলেন, আমরা কেন আসামিদের উসকে দিতে যাব? আসামিরা দীর্ঘদিন হাজতে থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন। আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, সকালে কিছু কারাবন্দি প্রিজনভ্যান থেকে নামার সময় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন বলে শুনেছি।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারী থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করে আইনজীবীরা।
এছাড়াও বিচারকের সাথে অশোভন আচরণ ও অশালীন শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সাথে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।