Home প্রচ্ছদ বেগম খালেদা জিয়াও ঘটনা সম্পর্কে আগেই অবহিত ছিলেন–প্রধানমন্ত্রী

বেগম খালেদা জিয়াও ঘটনা সম্পর্কে আগেই অবহিত ছিলেন–প্রধানমন্ত্রী

30

অপূর্ব ফারুক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা হতে পারে না। আলামত ধ্বংস, খুনীদের পালাতে সহায়তা করা এবং বিচারকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার যে অপচেষ্টা তাতেই এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। বেগম খালেদা জিয়াও ঘটনা সম্পর্কে আগেই অবহিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঐ দিন রাত ১১ টার দিকে চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে তাজউদ্দিন ছিল, একজন কারারক্ষী এবং শোনা যায় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম সে সময় ঢাকায় এসেছিল এবং খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিল।
তিনি বলেন, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সবাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। কাজেই, তারাই এদের রক্ষা করে এবং দেশ থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কারণ, যখন তারা জানলো যে আমি মরি নাই, বেঁচে আছি, তখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ সকালে গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভেনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন কারারক্ষী এর সঙ্গে জড়িত ছিল। জেলখানার ভেতর গ্রেনেড পাওয়া গেল (২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের মত আর্জেজ গ্রেনেড) এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল জোগার করেছিল তাদের মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলো ছিল সবাই সেগুলো মারতেও পারেনি। রমনা হোটেলের সামনের গলিতে এবং কয়েকটি জায়গায় সেই গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আক্রমণকারীদের রক্ষা করার জন্য সেদিন ভয়াবহতার মধ্যেই পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। সব আলামত সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ধুয়ে নষ্ট করা হয়েছে। একটা গ্রেনেড অবিস্ফোরিত ছিল, সেটি সংরক্ষণের কথা বলায় একজন অফিসারকে ধমকানো হয়। পরে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা না থাকলে তো এমন হতে পারে না।
আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রারম্ভিক ভাষণ দেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হল। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলাম। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা ছিল, অনুমতি দেয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই করবো। পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম আমরা। কিন্তু তারা (সরকার) মধ্যরাতে মুক্তাঙ্গনে করার অনুমতি দিল। তখনই সন্দেহ হল কেন এতো রাতে অনুমতি দিল কেন? তাছাড়া, আমাদের সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। অবশ্য প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে আর্জেজ গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করবে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, গ্রেনেড হামলায় মানুষ মারা কোন ধরনের গণতন্ত্র ছিল?
বিএনপির সমালোনা করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারা গুম-খুনের কথা বলে। তাদের হারিছ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আরও কে কে গুম হয়েছে বলে বেড়ায়। পরে বিদেশে খোঁজ পাওয়া যায়। কেউ ভারতে, লন্ডনে , আসলে তারা নিজেরা নিজেদের গুম করে রাখে। এটাও এ দেশে ঘটে, দুর্ভাগ্য।
বিএনপির এই অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এমনকি জুলাই মাসে আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই এক অদৃশ্য শক্তির বলে তাদের দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়। সামরিক অসামরিক আমাদের অনেক কর্মকর্তাকে ও এসডি করা, চাকুরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে হত্যা, গুমসহ, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচারসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহিদ, ১৫ আগস্টের সকল শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং সম্ভ্রমহারা দু’লাখ মা-বোন স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিএমএ মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, এমপি গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।