Home সারাদেশ বানারীপাড়ায় ২টি কলেজসহ ৯শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানের পদ শুণ্য : শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

বানারীপাড়ায় ২টি কলেজসহ ৯শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানের পদ শুণ্য : শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত

28

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় ২টি কলেজ, ৪টি মাদরাসা ও ৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক,সুপার ও অধ্যক্ষ না থাকায় ভারপ্রাপ্তর ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে এসব বিদ্যাপিঠের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। কমিটি ও নিয়োগ নিয়ে দ্বন্ধের জেরে আদালতে মামলাসহ নানা জটিলতায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে প্রধানের পদটি শুণ্য রয়েছে। ফলে পাঠদানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মামলার রয়েছে,কমিটি নেই ও প্রধানের পদ শুণ্য রয়েছে সেখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক এবং ইউএনও’র যৌথ স্বাক্ষরে শুধু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তোলা সম্ভব হলেও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ সার্বিক আর্থিক কার্যক্রম করা সম্ভব হচ্ছেনা। উপজেলার বিশারকান্দি শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুর কারনে প্রায় দেড় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কলেজের কার্যক্রম চলছে। অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুর পরে কলেজের সহকারি অধ্যাপক আব্দুল হাদী প্রথমে এক মাস ও এর পর থেকে সহকারি অধ্যাপক সুবোধ চন্দ্র বিশ^াস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালণ করছেন। মসজিদবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজেও নেই অধ্যক্ষ। এ বিদ্যাপিঠটি স্কুল থেকে কলেজে রূপান্তর হওয়া ও এমপিও ভূক্তি না হওয়ার কারনে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভূক্তি হওয়ায় অধ্যক্ষ নিয়োগের পথ সুগম হয়েছে। এখানে প্রভাষক নজরুল ইসলাম ফিরোজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। বানারীপাড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মাহমুদিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসাইন খান ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট অবসরে গেছেন । সেই থেকে উপাধ্যক্ষ মাওলানা আ. জলিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালণ শেষে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী তিনিও অবসরে যান। এখন মাদরাসার সহকারি মৌলভী মাওলনা মো.আব্দুস সোবাহান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালণ করছেন। চাখারের চাউলাকাঠী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার গভর্নিংবডির কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হওয়ায় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছেনা। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাইয়ান ও ১ মার্চ উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হালিম আখুন্দ অবসরে যান। সেই থেকে সহকারি অধ্যাপক একেএম ফজলুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি একা তিনটি পদে দায়িত্ব পালণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলার চাখার দরবার মঞ্জিল আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলনা সিদ্দিকুর রহমান অবসরে যাওয়ায় উপাধ্যক্ষ একেএম সানাউল্লাহ্ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। আউয়ার ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে যাওয়ায় সুপার পদটি শুণ্য রয়েছে। সহ- সুপার মাওলানা মাহবুবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালণ করছেন। এদিকে নিজের সার্টিফিকেট জালিয়াতি প্রমানিত হওয়ায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার ধারালিয়া সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে আইনী জটিলতায় নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সহকারি প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম লিটন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।
উপজেলার বিশারকান্দি চৌমোহনা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অবসরে যান। এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আদালতে মামলা হওয়ায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সহকারি প্রধান শিক্ষক অধীর মজুমদার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকে স্কুলের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। উত্তরকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার-উল আমিন ২০১৭ সালে ২৪ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন মাঝি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালণ করছেন। সম্প্রতি এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হলেও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারনে সেই নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আমিনুল ইসলাম বলেন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি ও নিয়োগ নিয়ে আদালতে মামলা থাকা সহ নানা কারনে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ শুণ্য থাকায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে মামলাসহ এসব জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত প্রধানের পদ পূরণ করা প্রয়োজন বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত,বানারীপাড়া উপজেলায় ৩৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ১২৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬২ সহকারি শিক্ষকের পদ শুণ্য থাকায় এসব বিদ্যাপিঠে পাঠদানসহ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রমও চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।