Home জাতীয় বাজেটে বেকার ভাতা চালুর দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ

বাজেটে বেকার ভাতা চালুর দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ

38

স্টাফ রিপোটার: কর্মহীন যুবকদের জন্য বেকারভাতা, আত্ম-কর্মসংস্থানে রাষ্ট্রীয় সহায়তা, করোনাকালীন কর্মহীন হয়ে পড়া ও আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত যুবকদের প্রণোদনা, করোনাকালীন প্রবাস ফেরত যুবদের প্রবাসে কর্মে ফিরে যাওয়া, সরকারি শূন্যপদে সরাসারি নিয়োগসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে বাজেটে কর্মসংস্থান কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। এ দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বেলা সাড়ে ১২টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জাতীয় যুব সমাবেশ করেছে তারা। বক্তারা বাজেটে বেকার যুবকদের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন চেয়েছেন। সমাবেশটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি থাকলে বুধবার রাতে পুলিশ অনুমতি বাতিল করে। পরে পুলিশ শাহবাগে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ। অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ। এছাড়া বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, গোলাম রাব্বী খান (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ), চৌধুরী জোসেন (ঢাকা মহানগর উত্তর), অজিত বিশ্বাস (ফরিদপুর), সাজেদুর রহমান ঝিলাম (বগুড়া), জাহাঙ্গীর হোসেন (চাঁদপুর), ফাতেমা আক্তার মার্টিন (কক্সবাজার)। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল।
সমাবেশে যুব নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর উদযাপিত হচ্ছে। আজও দেশের ১ কোটি ১০ লক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, ২ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষি শ্রমিক এবং আরও প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ অন্যান্য পেশার শ্রমজীবি মানুষের কারো জন্যই, রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক, সামাজিক বা স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। সাধারণ মানুষ ক্রমে আরো নিঃস্ব হচ্ছে। দেশের ৩% লুটেরা ধনীর বিপরীতে ৯৭% সাধারণ মানুষ। দেশের এক চতুর্থাংশ কর্মক্ষম মানুষের পূর্ণকালীন কাজের ব্যবস্থা নেই। সরকারি চাকরিতে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৫১টি শূন্যপদ রয়েছে। দেশের উচ্চ শিক্ষিত যুবদের ৪৭ শতাংশের কাজ নেই। দেশের বিপুল এই কর্মহীন যুবদের সাথে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যোগ হয়েছে আরও কোটি বেকার। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলছে, করোনাকালে প্রায় ৩ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। কমপক্ষে ১৪ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়েছে। ফরমাল সেক্টরে ১৩ ভাগ মানুষ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে দেশের ৭২% মানুষের আয় কমেছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে জনজীবনের সংকট আরো তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের বিপুল কর্মহীন যুবকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।
সমাবেশে বলা হয়, বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি তা কর্মসংস্থানবান্ধব নয়। লাখ লাখ যুবক বর্তমানে চাকরি হারা, বেকার ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে ব্যবসায় বাণিজ্যে সংযুক্ত হতে পারছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগামী বাজেটসহ পরবর্তী বাজেটগুলোতে সুস্পষ্ট নজরদারি থাকা উচিত। বিদেশেও আমাদের কর্মসংস্থান বর্তমানে কাঙ্খিত হারে বাড়ছে না। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের সুযোগ তৈরি হলেও এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বেসরকারি বিনিয়োগের প্রতি জোর দিতে হবে। এ জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ব্যবস্থার তদারকি বাড়াতে হবে। ব্যাংকের কৃত্রিম আয় বন্ধ করে বিনিয়োগ আদায়ের হার বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরে ১৮.৪ লাখ এবং বৈদেশিক কর্মে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় রফতানিমুখী খাতের জন্য খুব সাধারণ কিছু উদ্যোগ ছাড়া বেকারত্ব সুবিধা প্রবর্তনের মতো কোনো উদ্যোগ নেই। বেকার ভাতা চালু হলে এটি ছিটকে পড়া বেকারদের জন্য সহায়ক হবে। যাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা যাবে না, কিন্তু কর্মে ইচ্ছুক তাদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা দরকার।
বাজেটে যাতে বেকার যুবকদেও আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে, সেই আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
যুব ইউনিয়ন উত্থাপিত ৯ দফা দাবি হলো-কর্মহীন যুবদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা, আত্ম-কর্মসংস্থানে রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেওয়া, করোনাকালীন কর্মহীন হয়ে পড়া ও আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্ত যুবকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রণোদনা দেওয়া, করোনাকালীন প্রবাস ফেরত যুবকদের প্রবাসে কর্মে ফিরে যাওয়া, সরকারি শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ-আউটসোর্সিং কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা, ঘুষ ছাড়া চাকরি-আবেদনে ব্যাংক ড্রাফট-পেঅর্ডার নেওয়া বন্ধ করা, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগ পরীক্ষা বিভাগীয় সদরে নেওয়া, কর্মসংস্থান ব্যাংকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সহজ শর্তে যুবদের ঋণ দেওয়া, জাতীয় বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেওয়া, কর্মপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইন নিবন্ধন কেন্দ্র চালু করা ও সেইসব যুবদের একবছরের মধ্যে কাজের ব্যবস্থা করা।
সমাবেশ শেষে সংসদ অভিমুখে একটি মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের বাধায় মিছিলটি এলিফ্যান্ট রোডে গিয়ে শেষ হয়।