Home মতামত বাজেটের অ আ ক খ এবং বাজেট প্রণয়নে আমাদের করণীয়

বাজেটের অ আ ক খ এবং বাজেট প্রণয়নে আমাদের করণীয়

21

সৈয়দ অামিরুজ্জামান |

জাতীয় বাজেট একটি দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দলিল। চূড়ান্ত বিচারে এটি একটি অার্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার দলিলও বটে। বাজেটে একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরা হয়। একটি দেশের সরকার আসলে কোন কোন শ্রেণি স্বার্থের রক্ষক ও কার কতটা বাস্তবায়নকারী ও কতটা সংখ্যালগিষ্ট অার কতটা সংখ্যাগরিষ্টের জন্য জনগণতান্ত্রিক তার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে বাজেট।
প্রতিবছরই সরকারের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণের কাছে বাজেট উপস্থাপন করেন। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতি অর্থ বছরের (অর্থবছর হলো ১২ মাসের একটি সময়কাল- যার ভিত্তিতে সরকার বাজেট তৈরী করে। আমাদের দেশে অর্থ বছর হচ্ছে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন।) শেষ মাসের শুরুর দিকে অর্থাৎ জুন মাসের শুরুর দিকে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করার অধিকার তাদের আছে। আর যেহেতু জনগণের দেওয়া করের টাকা দিয়েই সরকার চলে। তাই ঘোষিত বাজেটে আমাদের আয় – রোজগারের পথ সহজ করা, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, চাল, ডাল, তেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা, আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের দায়িত্ব সরকার কতটুকু নিবে, জীবন-জীবিকা ও স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপনের জন্য সরকারের পরিকল্পনা কী, কৃষিতে কত ভর্তুকি দিবে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাতে সরকার কত বরাদ্দ দিবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে জেনে-বুঝে বাজেট প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার জন্য আমাদের বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করা জরুরি।

বাজেট আসলে কী?
সংক্ষেপে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবকে বাজেট বলে। কোন ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানও একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য বাজেট তৈরী করতে পারে, করেও। একটি দেশের সরকার প্রতি অর্থ বছরের জন্য বাজেট তৈরী করে থাকে। অর্থাৎ যে বছরের জন্য বাজেট, সেই বছরের সম্ভাব্য আয় কত হবে তা জেনে বা অনুমান করে সেই টাকা দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে গুরুত্ব ও প্রয়োজনানুযায়ী কাদের জন্য- কোন কোন খাতে খরচ করা হবে তার হিসেব-নিকেশ ঠিক করাটাই হলো বাজেট।
একটি দেশের সরকার কর্তৃক পেশকৃত বাৎসরিক সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবকেই বাজেট বলা হয়।

বাজেট পরিভাষা-
প্রস্তাবিত বাজেট: যে বাজেট সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী সাধারণত একটি অর্থ বছরের শেষ মাসের শুরুর দিকে সংসদে উপস্থাপন করেন তাকে প্রস্তাবিত খসড়া বাজেট বলে।

সংশোধিত বাজেট: যে বাজেটটি আগের অর্থ বছরে পাশ হয়েছে অথচ চলতি অর্থ বছরের (বাজেট অনুযায়ী যার কাজ আগে থেকেই চলছে) বিভিন্ন খাতে হয়তো আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আয় বা খরচ হয়েছে, এছাড়াও আয় বা ব্যয়ের ১১ মাসের (জুলাই থেকে মে) পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে ১২তম মাসের (জুন মাসের) আয়-ব্যয়ের একটি হিসেব তৈরী করা হয়- এই সব হিসেব একত্রিত করে চলতি অর্থ বছরেরর জন্য যে বাজেট তৈরী করা হয় তাকে সংশোধিত বাজেট বলে।

সম্পুরক বাজেট: যে বাজেটে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় তাদের জন্য বরাদ্দ থেকে বেশী খরচ করে ফেলে, তখন ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়তি খরচের কারণে নতুন করে একটি বাজেট তৈরীর দরকার হয়- তাকেই সম্পুরক বাজেট বলে।

সরকারের আয় ও ব্যয় সমান কিনা সেই বিবেচনায় বাজেট দুই রকম:
১। সুষম বাজেট: যে বাজেটের আয় ও ব্যয় সমান হয় তাকে সুষম বাজেট বলে। আর
২। অসম বাজেট: যে বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী হয় ( ঘাটতি বাজেট ) বা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশী হয় (উদ্বৃত্ত বাজেট) তাকে অসম বাজেট বলে। আমাদের মতো দেশে সব সময় ঘাটতি বাজেট তৈরী করা হয়।
আয় ও ব্যয়ের ধরনের ভিত্তিতে বাজেটের দু’টি অংশ বা বাজেট দুই ধরনের:

রাজস্ব বাজেট বা অনুন্নয়ন বাজেট: যে বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের হিসাব থাকে তাকে রাজস্ব বাজেট বা অনুন্নয়ন বাজেট বলে। আমাদের দেশে রাজস্ব আয়ের কিছু অংশ উন্নয়ন কাজেও খরচ করা হয়। রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো হলো: দেশরক্ষা, আইন-শৃঙখলা রক্ষা, প্রশাসন চালানোর খরচ। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের খরচ, হিসাব ও নিরীক্ষা, শিক্ষা, পেনশন ও অবসর ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অক্ষম প্রতিবন্ধী ভাতা, সাধারণ অর্থনৈতিক সেবা, ভর্তুকি, দেশের ভিতর ও বাইরে থেকে নেয়া ঋণের সুদ ইত্যাদি।

উন্নয়ন বাজেট: যে বাজেট দেশের উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য তৈরী করা হয় তাকে উন্নয়ন বাজেট বলে। এর ৩টি অংশ- ১) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা এডিপি, ২) অনুন্নয়ন বাজেট থেকে বরাদ্দ করা কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী ও ৩) এডিপির বাইরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী বা কাবিখা।
এডিপিতে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্হ্য ও পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক খাত যেমন খেলাধূলা ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, নারী ও যুব উন্নয়ন, গণসংযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্হান খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জন্য থোক বরাদ্দ দেয়া হয়।

জিডিপি (Gross Domestic Product): একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সাধারণত এক বছরে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হয় ও সেবার যোগান দেওয়া হয় তার বাজার মূল্যকে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন বলে। জিডিপি চলতি বাজার মূল্য ও স্থির মূল্য- এই দু’ভাবে হিসাব করা হয়। স্থির মূল্যে একটি ভিত্তি বছরের দামকে মাথায় রেখে জিডিপি হিসাব করা হয়, আর চলতি বাজার মূল্যে জিডিপি পরিমাপের সময় প্রত্যেক বছরের বাজার দর হিসাবে আনা হয়।

জিএনআই (Gross National Income): একটি দেশের জনগণ সাধারণত এক বছরে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে ও সেবাকর্ম যোগান দেয় তাকে জিএন আই বা মোট জাতীয় আয় বলে। একে জিএনপি (Gross National Product) বা মোট দেশজ উৎপাদনও বলে। জিএনআই হিসাবের সময় প্রবাসী নাগরিকদের পাঠানো টাকা (রেমিট্যান্স) যোগ করা হয়, আর দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের উৎপাদন ও আয় বাদ দেওয়া হয়। রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের পার্থক্য যোগ করা হয়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিঃ স্থির মূল্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে। সহজ ভাষায়, একটি দেশের মোট জাতীয় আয় পরবর্তী বছরে যত শতাংশ বাড়ে তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা হয়।

প্রত্যক্ষ কর: যে করের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ভার একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানর উপর পড়ে, তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে। যেমন- ব্যক্তির আয়ের উপর কর বা আয়কর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানর আয়ের উপর কর বা কর্পোরেট কর, ঘর-বাড়ী জমিজমার উপর কর বা সম্পত্তি কর, উত্তরাধিকার কর, দানকর ইত্যাদি।

পরোক্ষ কর: যে করের ভার করদাতা অন্যের উপর স্থানান্তর বা চাপিয়ে দিতে পারে তাকে পরোক্ষ কর বলে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার কোন একটি ঔষধ কোম্পানীর ঔষধের উপর কর আরোপ করলে- আসলে তা জনগণকেই দিতে হয়। কারণ ওই নির্দিষ্ট ঔষধ কোম্পানীটি তার ব্যবসার লাভের টাকা থেকে সরকারকে ভ্যাট দেয় না, ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাটের টাকা আদায় করেই সেই টাকা সরকারকে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, মোট করের তিন-চতুর্থাংশই পরোক্ষ কর।
যেমন: মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের উপর কর বা আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, মাদক জাতীয় দ্রব্যের উপর কর বা আবগারি শুল্ক, পর্যটনের উপর কর বা প্রমোদ কর ইত্যাদি।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট: কোনো পণ্য উৎপাদনের প্রত্যেক ধাপে ধাপে নিট মূল্যের উপর যে কর ধার্য্য করা হয় তাকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বলে। মনে করি, একটি একটি সুতার তৈরী শাড়ীর দাম ৮০০ টাকা। আমরা জানি, একটি শাড়ী তৈরী করা পর্যন্ত কয়েকটি স্তর পার করতে হয়। যেমন: প্রথমে তুলা, তারপর যথাক্রমে কাপড় – শাড়ী তৈরী ও শেষে বিক্রির জন্য দোকানে উঠানো। এখানে তুলা হচ্ছে শাড়ীর উৎস উপাদান। ধরি, চাষি তার উৎপন্ন তুলা পাইকারের কাছে ১০০ টাকায় বিক্রি করলো। এক্ষেত্রে ভ্যাট দিতে হলো ১৫ টাকা। এরপর পাইকার আরও ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকায় সুতাকলে বিক্রি করলো। এক্ষেত্রে ভ্যাট ১৫ টাকা। সুতা তৈরীর পর তা ৩০০ টাকায় কাপড়কলে বিক্রি করা হলো- এক্ষেত্রে ভ্যাট ১৫ টাকা। কাপড়কল থেকে তা ৪০০ টাকায় কাপড় কারখানায় গেল- এক্ষেত্রেও ভ্যাট ১৫ টাকা। কাপড় কারখানা থেকে শাড়ী তৈরী হয়ে যখন দোকানে গেল তখন তার দাম নির্ধারিত হলো ৬০০ টাকা। অর্থাৎ শাড়ীর কেনা দাম থেকে ২০০ টাকা বেশী রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভ্যাট ৩০ টাকা। একেবারে শেষ ধাপে ক্রেতা দোকান থেকে ওই শাড়ীটি কিনলো ৮০০ টাকায়। এক্ষেত্রেও ভ্যাট ৩০ টাকা। তার মানে ৮০০ টাকায় যে শাড়ীটি বিক্রি হলো তার জন্য মোট ভ্যাট দিতে হয়েছ- ( ১৫ + ১৫ + ১৫ + ১৫ + ৩০ + ৩০ ) = ১২০ টাকা। এখানে দেখা যাচ্ছে, উপরে উল্লেখিত প্রত্যেক স্তরেই সরকারে একটা নির্দিষ্ট হারে দেয়া কর যোগ করেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে- এটাকেই বলে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট।

আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক: যে কর বিদেশ থেকে আমদানি করা ও দেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্যের উপর আরোপ করা হয় তাকে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক বলে।

সম্পূরক শুল্ক: যে কর বিভিন্ন করের মধ্যে অসমতা দূর করার জন্য আরোপ করা হয় তাকে সম্পূরক শুল্ক বলে। আমাদের দেশে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় বলে, দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রধানত আমদানি পর্যায়েই সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়।

ট্যাক্স হলিডে বা কর মওকুফ: বিনিয়াগকে উৎসাহিত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর মওকুফ করা অথবা করের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখাকে ট্যাক্স হলিডে বলে।

সরকারের আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত সমূহ:
আমাদের সরকারের আয়ের উৎসগুলো হচ্ছে- ১। কর ও ২। কর ছাড়া অন্যান্য আয়।

কর থেকে আয়: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত কর থেকে সবচেয়ে বেশী রাজস্ব আয় হয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব কর নিয়ন্ত্রণ করে না। আর সরকার দেশ পরিচালনা তথা জনগণের স্বার্থের কথা বলেই প্রতি বছর রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত করগুলো হচ্ছে- ক) আয় ও মুনাফার উপর কর; খ) আমদানি শুল্ক ও গ) রপ্তানি শুল্ক; ঘ) মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট; ঙ) আবগারি শুল্ক; চ) সম্পূরক শিল্প।
যে করগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে না সেগুলো হচ্ছে- ক) যানবাহন কর; খ) ভূমি রাজস্ব; গ) স্ট্যাম্প বিক্রি থেকে আয়; ও ঘ) মাদক শুল্ক।
কর ছাড়াও আর যেখান থেকে সরকার আয় করে সেগুলো হচ্ছে:
১) ব্যাংক ও বীমা সহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লাভ ও মুনাফা থেকে; ২) বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনা থেকে আয়; ৩) প্রশাসনিক ফি; ৪) ভাড়া, ইজারা, টোল ও লেভি; ৫) রেলওয়ে, ডাক বিভাগ, রয়াল্টি ও সম্পত্তি থেকে আয়; ৬) তার ও টেলিফোন বিভাগ থেকে আয়; ৭) বেতার-টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন ও স্পন্সর থেকে আয়; ৮) বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স; ৯) বিদেশে সৈন্য পাঠানো থেকে আয় ইত্যাদি।

ব্যয়ের খাত সমূহ: সরকারের ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো হচ্ছে- ১) কৃষি; ২) শিল্প; ৩) শিক্ষা; ৪) স্বাস্থ্য; ৫) জ্বালানী ও বিদ্যুৎ; ৬) গৃহায়ন ও আবাসন; ৭) সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ; ৮) সাধারণ প্রশাসন পরিচালনা; ৯) পরিবহন ও যোগাযোগ; ১০) বিনোদন; ১১) সংস্কৃতি ও ধর্ম; ১২) ভর্তুকি; ১৩) ঋণ পরিশোধ; ১৪) প্রতিরক্ষা ইত্যাদি।
প্রতি বছরই সরকার তার বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য দেশের ভিতর ও বাইরে থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ নেয় (দেশের ভিতরে বণ্ড ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এবং কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে)। সরকারের রাজস্ব আয় থেকেই প্রতি বছর সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়- একে ঋণ বা ‘দায়’ পরিশোধ বলা হয়।
একটি দেশের জাতীয় বাজেটে সরকারী দলের ‘রাজনৈতিক আদর্শ ও অর্থনৈতিক চিন্তা’ প্রতিফলিত হয়। বাজেটের মধ্য দিয়ে সরকার ও দলের শ্রেণী চরিত্র প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ একটি সরকার আসলে কোন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে- দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনতা ও মধ্যবিত্তের নাকি সংখ্যাল্প ধনী, ব্যবসায়ী সহ শোষক শ্রেণীর সেটি সহজেই বুঝা যায়। জাতীয় বাজেট যেহেতু একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দলিল এবং বাজেটে ৫ বছরের জন্য জনগণের জন্য বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য আর্থিক বরাদ্দ ও উনয়ন কৌশল ঘোষণা করা হয়, সেহেতু সঙ্গতকারণেই প্রত্যেক রাজনৈতিক কর্মী-সংগঠক ও জনগণকে বাজেট জেনে-বুঝে তুলনামূলক গুরুত্ব বিবেচনা করে বিভিন্ন খাতওয়ারী বরাদ্দ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়া সহ জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী গণতান্ত্রিক বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আন্দোলন বেগবান করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে বলবো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান শোষণমূলক অার্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও জাতীয় বাজেটে এর একটা যথাযথ নির্দেশনা ও কর্মসূচি থাকা দরকার। দরকার জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুশাসন কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, তা বাজেটে উল্লেখ করা। আর আমাদের সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা বাজেটে উল্লেখ করতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই চার নীতিতে দেশকে এগিয়ে নিতেই সেই নিরিখে বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রাসঙ্গিক হবে। তাহলেই জনঅাকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব হবে।

-লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।