Home জাতীয় বাগাতিপাড়ায় কিংবদন্তি শিক্ষক নুরমোহাম্মদ সরকারের জীবনাবসান

বাগাতিপাড়ায় কিংবদন্তি শিক্ষক নুরমোহাম্মদ সরকারের জীবনাবসান

44

বাগাতিপাড়া ( নাটোর) প্রতিনিধিঃ ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা কিংবদন্তি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার শিক্ষক নূর মোহাম্মদ সরকার আর নেই। শনিবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিঃ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ বাড়ীতেই জীবনাবসান ঘটে প্রবীন শিক্ষক নুরমোহাম্মদ সরকারের। রবিবার ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে জানাযার শেষে নিজ বাড়িতে তার মরহুমা স্ত্রীর কবরের পাশে সমাধীস্থ করা হয় প্রবীন শিক্ষক নুরমোহাম্মদ সরকারের।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ২৪ জুলাই ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তখনকার রাজশাহী জেলার সদর মহাকুমার লালপুর থানার পাঁকা ইউনিয়ন বোর্ডের গালিমপুর গ্রামে, বাবা নছির উদ্দিন সরকার মা জমিরন নেছার দ্বিতীয় সন্তান নুরমোহাম্মদ সরকার জন্মগ্রহণ করেন ফাঁগুয়াড়দিয়াড় গ্রামে তার নানারবাড়িতে। বাবা নছির উদ্দিন সরকার ছিলেন সেই সময়ের এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী।
নুরমোহাম্মদ সরকারের লেখাপড়া শুরু নিজ গ্রাম পারকুঠিতে (গালিমপুর) অবস্থিত ” গালিমপুর মিডল ইংলিশ স্কুলে “। সেখান থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মাইনর পাশ করেন। লেখাপড়া শেষে তিনি বাবার ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব পান।ব্যবসার কাজে তাকে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্রে যেতে হত।
তার মধ্যে প্রধান ছিল বর্তমান দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর।তখনকার দিনে ব্যবসার কাজে দিনের পর দিন অবস্থান করতে হত
ব্যবসা কেন্দ্রে।থাকার বন্দোবস্ত হত আড়ৎ বা ব্যবসায়ীর বাড়িতে। এমনই এক পরিস্থিতিতে তাকে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করতে হয় চিরিরবন্দরে। সময় কাটানোর জন্য তিনি ঐ ব্যবসায়ীর ছেলেমেয়েদের পড়াতে থাকেন।তার পড়ানোর কৌশল দেখে তাকে স্থানীয় এক স্কুলে শিক্ষকতার প্রস্তাব দেয় ঐ ব্যবসায়ী।সেখানে খুব অল্প সময় শিক্ষকতা করেন তিনি। তারপরে ফিরে আসেন বাড়িতে।এর মাঝে তার ডাক পড়ে কৃষ্ণপুর(গালিমপুর)
গ্রামের জোতদার গিরীশ চন্দ্র রায়ের হিসাব নিকাশ দেখার জন্য। গিরীশ চন্দ্র রায় ছিলেন ঐ সময়ের ধনাঢ্য ও প্রভাবশালি,সুতরাং এই প্রস্তাব না করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।তিনি তার সততা ও মেধার গুণে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন গিরীশ চন্দ্র রায়ের। আস্থাটা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে গিরীশ চন্দ্র রায়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ ও টাকা পয়সার আলমারির চাবি পর্যন্ত থাকতো তার কাছে। এই জোতদারের বাড়ি ” গিরীশ ধামে ” অবাধ প্রবেশ অধিকার ছিল একমাত্র নুরমোহাম্মদ সরকারের।
এক পর্যায়ে গিরীশ চন্দ্র রায় তার গড়া স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তাকে ।
গিরীশ ধামের অনেকেই ছিল সরাসরি তার ছাত্র- ছাত্রী ।
বাগাতিপাড়ার এই কিংবদন্তি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও লোকসংগীত শিল্পী আব্বাস উদ্দীনকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন নূর মোহাম্মদ সরকার।