Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বশেমুরবিপ্রবির এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

বশেমুরবিপ্রবির এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

13

মো মোস্তাফিজুর রহমান, বশেমুরবিপ্রবি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ হাজার। তাদের পাঠদানের জন্য মোট শিক্ষক রয়েছেন ৩১৪ জন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ১১০ জন। এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক না থাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির (বশেমুরবিপ্রবি) অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ভোন্তির শিকার হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক। সেখানে বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত রয়েছে ১:৫০। অর্থাৎ প্রতি পঞ্চাশ শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির সূচনালগ্নে মাত্র ৫ টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে বাড়তে থাকে এর বিভাগ ও আসন সংখ্যা। সাবেক উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদ তার সময়কালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা আনুষাঙ্গিক সেবা ছাড়াই ৫ বিভাগের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেন মোট ৩৪ বিভাগ। এতে প্রতি শিক্ষাবর্ষে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হলেও ছিল না পর্যাপ্ত শিক্ষক। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিকস্খলনের অভিযোগে তিনি উপাচার্য পদ হারালেও কাটেনি এই সংকট। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব যোগদানের পর থেকে রিজেন্ট বোর্ড ও ইউজিসির একাধিক সভায় শিক্ষক সংকট সমাধানের কথা তোলেন। এতে কয়েকবার শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন পেলেও শিক্ষার্থী অনুপাতে বেশিরভাগ সভায় মেলেনি উত্থাপিত নিয়োগের অনুমোদন।পরবর্তী নানা সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কয়েক বিভাগে অস্থায়ী ভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও তা বিভাগ ও শিক্ষার্থী অনুপাতে নেহায়েত কম। শিক্ষাছুটিতে থাকা ওই শিক্ষকদের পাঠদানের ঘাটতি পূরণে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন ৬৫ শিক্ষক পাঠদান করে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটির নিয়মে এক বিভাগের শতকরা ৪০ ভাগ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে নেই এ সংক্রান্ত কোন বিধিবিধান। তবে চাকরিতে যোগদানের দুবছর শেষে পিএইচডি ও এমফিল করতে শিক্ষা ছুটি পাওয়ার বিধান বর্তমানে কার্যকর রয়েছে।এতে পিএইচডি করার জন্য পাঁচ বছর ও এমফিল বা স্নাতকোত্তর করার জন্য সর্বোচ্চ দুবছরের সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও সময়সীমা শেষে বিদেশ থেকে ফিরছেন না অনেক শিক্ষক। এতেকরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান করা শিক্ষকদেরও নিজেদের নির্ধারিত ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস। ফলে একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ভাবে পাঠগ্রহণ ব্যহত হচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের শতকরা ১০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকলেও বেশকিছু বিভাগে ৫০ ভাগ থেকে ৭০ ভাগ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৪ শিক্ষকের মধ্যে ১৫ শিক্ষক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ শিক্ষকের মধ্যে ৩ শিক্ষক, রসায়ন বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৮ শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগের ৮ শিক্ষকের মধ্যে ৬ শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১০ শিক্ষকের মধ্যে ৫ শিক্ষক, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৮ শিক্ষকের মধ্যে ৪ শিক্ষক, ফার্মেসি বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৬ শিক্ষক, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭ শিক্ষকের মধ্যে ৪ শিক্ষক, পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪ শিক্ষকের মধ্যে ৭ শিক্ষক এবং অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১২ শিক্ষকের মধ্যে ৬ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।এরমধ্যে অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নুরুন্নবী, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. পিয়ার হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাফসা আশা ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল আনোয়ার ইতিমধ্যে নিজেদের চাকরি থেকে অব্যহতি চেয়ে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে যাদের ছুটি শেষ হয়েছে, তাদের আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য আদেশ করা হয়েছে। তারা না ফিরলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এরমধ্যে যারা অব্যাহতির আবেদন করেছেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সব দেনা পাওনা মেটানো শেষে আমরা অব্যাহতি প্রদান করব।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম থেকেই শিক্ষক সংকট সমাধানের চেষ্টা করে আসছি। ইতিমধ্যে ইউজিসি ও রিজেন্ট বোর্ডে আলোচনা করে বেশকটি বিভাগে স্থায়ী ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি৷ তাছাড়া শিক্ষাছুটিতে বিলেতে থাকা শিক্ষকেরা না ফিরলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।