Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বশেমুরবিপ্রবিতে অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

বশেমুরবিপ্রবিতে অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

44

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(বশেমুরবিপ্রবি) সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের(১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও আমাকে মাঝেমাঝে ভুলে যেতে হয় আমি একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কারন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফি ৪০০০/৫০০০ টাকা ধার্য করার বিষয়টি আমার কাছে অবান্তর মনে হয়। যেখানে গোপালগঞ্জের মতো ব্যয়বহুল শহরে একজন শিক্ষার্থীকে মাসের টাকা ম্যানেজ করতে হিমসিম খেতে হয়। টিউশনি খুঁজে পাওয়াটাও এক প্রকার সোনার হরিণ খুঁজে পাওয়ার মতোই দুর্বোধ্য বিষয়।

তিনি আরও বলেন, এহেন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রতি সেমিস্টারে ৪-৫ হাজার টাকা বহন করা প্রায় অসম্ভব বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমার আকুল আবেদন- আমরা এমন শোষনীয় সেমিস্টার ফি থেকে মুক্তি চাই। আমরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাই নাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেওয়া।

ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাবুদ শেখ বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কাছে প্রতি সেমিস্টারে ৫-৭হাজার টাকা বহন করা চারটিখানি কথা না৷ কারন বর্তমানে একজন শিক্ষার্থীর মেসের যাবতীয় খরচ মিলে ৬হাজার টাকার উপরে চলে যায়। সে জায়গায় নতুন করে সেমিস্টার ফি যদি ৫-৭হাজার টাকা দিতে হয় তাহলে সে শিক্ষার্থীর পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব হবেনা৷ কারন একজন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এক সন্তানের পেছনে মাসে এত টাকা বহন করা কখনোই সম্ভব না।

তিনি বলেন, আমরা ইতিপূর্বে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে ইউজিসির সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তখন তাদের সমাধান শোনে বাধ্য হয়ে সেটি মেনে নেওয়া ব্যতিত অন্যকোনো উপায় আমাদের ছিলোনা। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফি এত টাকা হওয়া কখনোই যুক্তিযুক্ত না। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা চাই।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সেমিস্টার ফি বছরের শুরুতে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় সেমিস্টারের জন্য চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় এবং প্রতি সেমিস্টারে শুধুমাত্র পরীক্ষায় রেজিষ্ট্রেশন ফি ২৫০-৩০০টাকা জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে উপস্থিত হতে পারেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি দুই হাজার থেকে ২৫০০ টাকা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা এবং পরীক্ষার কেন্দ্র ফি সহ যাবতীয় খরচ মিলে মাত্র ৫০০টাকা প্রদান করে। অন্যদিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিষ্টার ফি বাবদ ২ হাজার ৫০০টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ তারা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০টাকা প্রদান করে থাকে। একইভাবে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টার ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা প্রদান করেছে বলে জানা যায়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা শরাফত আলী বলেন, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি-এর নিয়মানুযায়ী চলে৷ ইউজিসি থেকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমান বাজেট দেওয়া হয়। এবং প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ ইউজিসির বাজেট সহ শিক্ষার্থীদের থেকে ভর্তি ফি এবং সেমিস্টার ফি নিয়ে চলে। সেমিস্টার ফি নিয়ে এর আগে সাধারন শিক্ষার্থী সহ ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আমরা কথা বলেছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা সেমিস্টার ফি ধরেছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও প্রায় সমপরিমান ফি নেওয়া হয়।

সেমিস্টার ফি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড এ কিউ এম মাহবুব বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর সেমিস্টার ফি বাড়ানো হয় কিন্তু আমরা সে তুলনায় কমিয়েছি, আমরা আর কত কমাবো। আমাদেরতো একটা লিমিটেশন আছে। ছাত্রদের এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমরা আর কোনো টাকা কমাতে পারবোনা। তবে যেসকল শিক্ষার্থী দরিদ্র তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব।

উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালে ২৬ অক্টোবর পরীক্ষা ফি, ভর্তি ফি, কেন্দ্র ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু করে। টানা তৃতীয় দিনের আন্দোলনের মুখে ২৯ অক্টোবর উপাচার্য সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনায় বসেন এবং সেমিস্টার ফিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ফি কমানোর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলেও এর কোন পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।