কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সৈকতে একের পর এক ঢেউ আছঁড়ে পড়ছে। একই সাথে আকাশের কালো মেঘ জানান দিচ্ছে বর্ষার আগমনের। এমন রুদ্র মুর্তি দেখে অনেকেই ভয়ে সমুদ্রে নামছে না। আবার কেউ ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে সমুদ্রে গোসলসহ আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। এ যেন প্রকৃতি আর পর্যটকের নীরব সেতু বন্ধন। এসব পর্যটকদের কাছে বর্ষায় সমুদ্র বিলাস আলাদা অনুভূতি। তবে এমন দৃশ্য স্বরনীয় করে রাখতে অনেকেই ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলছেন। সৈকত ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে সৈকতে পর্যটকদের গোসল ও সাতার কাটতে মাইকিং করে সচেতন করছেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ। কিন্তু এমন সচেনতায়ও আগত পর্যটকরা বিচলিত হচ্ছে না। তবে আগত পর্যটকরা জানান, শীতের সমুদ্র এবং বর্ষার সমুদ্রের রুপ সম্পুর্ন ভিন্নতা রয়েছে। তদের মতে সমুদ্রের রুপ উপভোগ করতে হলে বর্ষা মৌসুমেই এখানে আসা উচিত।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ/সাত বছর আগে বর্ষায় কুয়াকাটা সৈকত খাঁ খাঁ করত। পর্যটকের পদচারনা ছিল না। চোখে পড়ত না জেলে ছাড়া কাউকে। আবাসিক হোটেল ব্যবসা পর্যন্ত অনেকের বন্ধ থাকত। কিন্তু চিত্র এখন পাল্টে গেছে। আগত পর্যটকরা শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির লেক, রাখাইন পল্লী, ঝাউ বন, লেম্বুর বন, লাল কাকড়ার চর, তিন নদীর মোহনা, কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহার সহ অধিকাংশ পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই শুধু সপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার নয়, এখন অন্যান্য দিনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুয়াকাটা পর্যটকদের আগমন বেড়ে গেছে এমটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা।
আগত পর্যটক মো.দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। আমাদের মতো করে বহু পর্যটক এখানে বেড়াতে এসেছে। বর্ষা মৌসুমে সাগরের ঢেউ আর ¯িœগ্ধ প্রকৃতি দেখার জন্যই এখানে মানুষ ছুটে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ঢাকা এবং কুয়াকাটার সড়ক সংযোগ এখন অতি সহজ হয়ে গেছে।
পর্যটক মাইশা জানান, অসম্ভব সৌন্দর্যে ঘেরা কুয়াকাটা। কখনো বর্ষা মৌসুমে আসা হয়নি। এবার বর্ষায় এলাম। উথাল পাতাল ঢেউ আর বৃষ্টি ভেজা এখানকার প্রকৃতি খুবই ভালো লেগেছে। অপর এক পর্যট রাসেদুল ও সারামনি দম্পতি জানান, বর্ষায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। নিড়িবিলি পরিবেশ। তেমন কোন পর্যটকদের কোলাহল নেই। নেই হোটেলে-মোটেলগুলোতে সিট না পাবার বিড়ম্বনা। রেস্তোরাগুলোতেও খাবারের দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। তাই তারা এই সময়টাই বেছে নিয়েছেন ।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কুটুম’র সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটিসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের আগমন বেশি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও পর্যটকের ব্যাপক চাপ রয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাই পারভেজ জানান, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। উত্তাল সমুদ্রে গোসল,সাতার কাটতে গিয়ে যেন কোন দূর্ঘটনায় না পরে সেদিকেও খেয়াল রাখছেন তারা। পাশাপাশি দূর্ঘটনা রোধে স্পীড বোট ও ওয়াটার বাইক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে বারবার সচেতন করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।