Home রাজনীতি বরিশাল-২ আসনে এমপি হতে তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীর লড়াই….

বরিশাল-২ আসনে এমপি হতে তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীর লড়াই….

18

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি॥ বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সাতজনই হলেন ৭১’র রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। লাল-সবুজ পতাকা ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ‘মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য’ মনে করে তরুণ বয়সে সন্মূখ সমরে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা এসব প্রার্থীরা আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারলে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মাট বাংলাদেশ বির্নিমাণে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদের মধ্যে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনেই তিন প্রার্থী ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্মূখ সমরে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এবং কাকতালীয়ভাবে তারা তিনজনই বিভিন্ন সময়ে এ আসনের এমপি ছিলেন। ভূমিকা রেখেছেন উন্নয়নেও। পুরনো আসনে পূনরায় এমপি হতে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবর্তীণ হয়েছেন তাঁরা। তাঁরা হলেন,বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বর্ষিয়ান রাজনীতিক ৫বারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ খান মেনন,দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম মনি। এ তিন নেতার মধ্যে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন । তিনি ১৯৭৯ সালে বরিশাল-২ (বাবুগঞ্জ-উজিরপুর ) আসনে প্রথম ও ১৯৯১ সালে একই আসনে নিজ দলের হাতুড়ি প্রতীকে দ্বিতীয়বার এবং ২০০৮,১৪ ও ১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীকে টানা তিন বার মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের জন্য গঠিত মন্ত্রী সভায় তিনি ডাক ও তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব¡ পালন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম মনি ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে বরিশাল সংযুক্ত পিরোজপুর বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি আসনে পরপর দুই বার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংশোধিত বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীকে তিনি তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ২০০৮ সালে বরিশাল-১ ( আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে প্রথম ও ২০১৪ সালে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে দ্বিতীয় বার নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। প্রসঙ্গত, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার মো. ইউনুসের ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। মুজিববাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতে এক মাসের সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর বয়রা বর্ডার এলাকা থেকে দেশে প্রবেশ করে ৪ অক্টোবর যশোরের বাঘারপাড়া নারকেলবাড়ি এলাকা থেকে পাকসেনাদের হাতে তালুকদার মো. ইউনুসসহ ৯৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আটক হন। প্রথমে তাদের ক্যান্টনমেন্টে ও পরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। সেখানে কোর্টমার্শালের বিচারে তাদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মুত্যু কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়।
১০ ডিসেম্বর তাদের ফাঁসি কার্যকরের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করলে কারাগারের দায়িত্বরতরা পালিয়ে যায়। ফলে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা জেলের ফটক ভেঙ্গে তাদের মুক্ত করেন। এর পরে ৪ দিন পায়ে হেঁেট তালুকদার মো. ইউনুস তিন সহযোদ্ধাসহ নিজ এলাকা বরিশালের গৌরনদীতে ফিরে এসে যুদ্ধে অংশ নেন। এদিকে নৌকা প্রতীক না পেয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম মনি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) ও বরিশাল-৩( মুলাদি-বাবুগঞ্জ ) আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এ দুটির যেকোন একটিতে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়তে জোট প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ফলে এ দুই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট তালুকদার মো.ইউনুস ও সরদার খালিদ হোসেন স্বপন এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন পেয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন তারা। মেননের কারনে এ দুই আসনের যেকোন একটিতে মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কপাল পুড়বে এটা সময়ের ব্যপারমাত্র। তবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এখানে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।