রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি:বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দের আক গ্রামে স্বামী, ভাসুর ও জা’র নির্যাতন সইতে না পেরে এক সন্তানের মা গৃহবধূ টুম্পা অধিকারী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষপানের আগে টুম্পা তার দুই পায়ে কলম দিয়ে নিজের মৃত্যুর কারণ ও দায়ীদের নাম এবং মৃত্যুর পর মায়ের চিতার কাছে তার মরদেহ সৎকার করার কথা লেখেন বলে জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার (৮ জুন) রাতে বিষপানে করে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে বুধবার (৯ জুন) বিকেলে টুম্পার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার রাতে টুম্পার বোন কল্পনা অধিকারী বাদী হয়ে টুম্পার স্বামী স্বপন মন্ডল, ভাসুর বিবেক মন্ডল ও জা রীতা রানী মন্ডলকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই রাতেই অভিযুক্ত স্বামী স্বপন মন্ডলকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বপনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

টুম্পার স্বামী গ্রেফতার স্বপন মন্ডল মাদারীপুর জেলার ডাসার থানার নবগ্রাম এলাকার প্রয়াত বঙ্কিম মন্ডলের ছেলে।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার জানান, ১১ বছর আগে পারিবারিকভাবে টুম্পার সঙ্গে স্বপনের বিয়ে হয়। শ্বশুর বাড়িরসহ অন্যান্যদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে টুম্পা তার স্বামীকে নিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দেরআক গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন। টুম্পা ও স্বপন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের ৮ বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। জমিজমা সহ পারিবারিক নানা বিষয়ে সুরহা করতে মঙ্গলবার সকালে টুম্পা তার শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরের নবগ্রাম এলাকায় যান। এ সময় ভাসুর বিবেক মন্ডল ও জা রীতা রানী মন্ডল তাকে অশ্রাব্য ভাষায় অপমান অপদস্ত করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। স্বামী স্বপন মন্ডল এর প্রতিবাদ করেননি। আগে থেকে তিনি স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে টুম্পা ওই রাতেই বাবার বাড়ি ফিরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। ওসি বলেন, মামলার এক নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিশু জানান, টুম্পার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার সময় হাটুর নিচের অংশের দু’পায়ে কলম দিয়ে তার মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুর জন্য দায়ী স্বামী স্বপন মন্ডল, ভাসুর বিবেক মন্ডল ও বিবেকের স্ত্রী রীতা মন্ডলের নাম লেখা দেখা যায়। এছাড়াও তার মায়ের শ্মশানের কাছে তার মরদেহ সৎকার করার কথা লেখেন তিনি।