Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বছর চলে যায় কিন্তু সিঙ্গারা থেকে যায় এক টাকায়!

বছর চলে যায় কিন্তু সিঙ্গারা থেকে যায় এক টাকায়!

48

নূর ই আলম, ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পাশ্ববর্তী ত্রিবেণীকে এখন এক টাকার সিঙ্গারার বাজার বললেও ভুল হওয়ার কথা নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে মানুষের জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে সেখানে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে সিঙ্গারা। অথচ সিঙ্গারা তৈরির মূল উপাদান আলু,পেঁয়াজ,মরিচ,তেলের দাম জনসাধারণের নাগালের বাইরে।

শুনতে অসম্ভব শোনালেও এমনটাই ঘটেছে ইবির পার্শ্ববর্তী শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী বাজারে। দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাসের এই সময়েও ত্রিবেণী বাজারে মাত্র ১ টাকায় সিঙ্গারা বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ বিক্রেতা শুকচান আলী। যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের দশ/বারোটি জেলায়।

বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১১ টার দিকে বিক্রি শুরু করেন তিনি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধা না হতেই প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার সিঙ্গাড়া বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে হাটের দিন বিক্রির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। তার ক্রেতাদের অধিকাংশই স্থানীয় এলাকার এবং নিকটবর্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়াও তার সিঙ্গারার সুখ্যাতি শুনে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এসে ভিড় করেন এই ১ টাকার সিঙ্গারা খেতে।

তিনি জানান, শুরুর দিকে এই সিঙ্গারার দাম ছিলো পঞ্চাশ পয়সা। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশকিছু বছর যাবৎ সিঙ্গারা বিক্রি করে যাচ্ছেন প্রতিটি এক টাকা মূল্যে। দাম মাত্র ১ টাকা হলেও স্বাদের ক্ষেত্রে কমতি নেই এই সিঙ্গারার। আগত ক্রেতারা নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই সাথে করে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবার পরিজনদের সাথে খাওয়ার জন্য।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির জন্য ব্যবসায় কেমন প্রভাব পড়ছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে প্রতিটি সিংগাড়া বানাতে আমার খরচ হতো ৮০ পয়সা। পন্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ার পর প্রতিটিতে খরচ হয় ৯০ পয়সা করে। সেক্ষেত্রে আমার লাভের অংশ তুলনামূলক অনেকটা কমে গিয়েছে। বাড়তি রোজগারের আশা ইতোপূর্বে একবার সিঙ্গারা বিক্রি ছেড়ে অটোভ্যান চালাতে শুরু করেছিলেন ষাটোর্ধ এই বিক্রেতা। তবে সেখানে আশানুরূপ রোজগার না হওয়ায় আবারো পুরোনো পেশায় ফিরে আসেন তিনি।

দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা জানান, লোকমুখে শুনেছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই কোন জায়গায় বর্তমান সময়েও নাকি ১ টাকায় সিঙ্গারা পাওয়া যায়। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগছিল তাই শীতের বিকেলে গ্রামীন পরিবেশ দেখতে আর এই বিখ্যাত সিঙ্গারার স্বাদ নিতে আমরা চলে এসেছি এখানে। বাজারে অন্যান্য সিঙ্গারা পাওয়া যায় ৫ টাকা পিচ করে, সে হিসেবে ১ টাকার এই সিঙ্গারা খুবই সুস্বাদু।

তবে, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমে গেছে। তাই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতা শুকচান আলীর। তিনি আশাবাদী যে, খুব দ্রুতই জিনিসপত্রের দাম আবারো কমে আসবে তখন আর কষ্ট করতে হবে না। তবে বিক্রি বেশী হওয়াতে লাভ কম হলেও কোনোরকমে চলে যাচ্ছে শুকচান আলীর।