Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বঙ্গবন্ধুকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রী প্রদান

বঙ্গবন্ধুকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রী প্রদান

31

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে আজ ২৯ অক্টোবর ২০২৩ রবিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই ডিগ্রি গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন ।
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধুকে ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদানের সাইটেশন পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং সমাবর্তন বক্তার সাইটেশন পাঠ করেন প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণায় বিশেষ মনোযোগী হওয়ার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এমন গবেষণা করতে হবে, যা দেশের উন্নয়নে সহায়ক হয়। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মান বজায় রেখে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের চলমান উন্নয়ন যাতে কখনোই বাধাগ্রস্ত না হয় সেলক্ষ্যে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্যও তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ ধরেই আমরা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু’র সব কর্মসূচি ছিলো সাধারণ মানুষের কল্যাণে। তাই আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছি। কৃষক, মজুর, দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু নিজের জন্য কিছু করেন নি, শুধু মানুষের জন্য করেছেন। তিনি দেশকে ধনে ও জ্ঞানে উন্নত করতে চেয়েছিলেন। দেশের সকল মানুষকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। বাঙালির মুক্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন থেকে তাঁর সংগ্রাম শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে তিনি জাতিকে প্রস্তুত করেন এবং বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশের সকল ইতিহাস ও অর্জন জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছিলো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হতে পেরে তিনি গর্বিত বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। চতুর্থশ্রেণি কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করায় বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেন নি। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু’র সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ সমাবর্তন আয়োজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের জন্যও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন। বঙ্গবন্ধু’র ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক গ্রন্থসমূহ পাঠের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানার জন্য প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের প্রতি আহŸান জানান। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, এই সমাবর্তন কোনো সাধারণ সমাবর্তন নয়; এটি বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক অনন্য ঐতিহাসিক আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান করতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত।
এই বিশেষ সমাবতর্নে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রীবর্গ ও সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ, সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজনসহ প্রায় ১৮ হাজার গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।