Home সারাদেশ ফের হকারদের দখলে কিনব্রিজ

ফের হকারদের দখলে কিনব্রিজ

30

সৈয়দ রাসেল আহমদ,সিলেট অফিস : সিলেটের সুরমা নদীতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কিনব্রিজের ওপর অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট বসাচ্ছেন হকাররা। সেতুর একাংশ দখল করে সবজি, ফল, কাপড়সহ নানা ধরনের দোকানপাট বসানো হচ্ছে। এতে হেঁটে সেতু পারাপার হতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছে পথচারীরা। এ ছাড়া সেতু সংকুচিত হয়ে যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।

পথচারী ও যানবাহনের চালকদের অভিযোগ, সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সেতুর একাংশ দখল করে হকাররা দোকানপাট বসানোর কারণে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে না। এ ছাড়া সেতু এলাকায় যানজটও বেড়েছে। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, হকারদের উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। তবু তাঁরা আবার দোকানপাট বসান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর উত্তরাংশের অনেক জায়গা দখল করে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন হকার সবজি, ফল, কাপড়, জুতা ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেসব পণ্য দরদাম করে কিনছেন অসংখ্য ক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণাংশের শুরুর বাঁ পাশে তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি। ওই অংশে যানজট দেখা যায়।

দক্ষিণ সুরমার ভার্তখলা এলাকার বাসিন্দা আনসার উদ্দিন বলেন, ব্যস্ত একটি সেতুর ওপরে হকাররা এভাবে দেদারসে দোকানপাট বসালেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অথচ পথচারীদের নিয়মিত দুর্ভোগ সহ্য করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। হকাররা সেতুর একাংশ দখল করে রাখায় যান চলাচলের পথও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, সিলেট শহরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত করেছে সুরমা নদী। দুই অংশকে সংযুক্ত করতে নদীর ওপর ১৯৩৬ সালে ধনুকের মতো বাঁকা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের লোহার তৈরি এ সেতুর নাম কিনব্রিজ। এটি এখন দেশ-বিদেশে সিলেটের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে যানবাহনের ভার বহন করে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কয়েক বছর আগে এখান দিয়ে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন সেতু দিয়ে ঠেলাগাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ হালকা যান চলাচল করে থাকে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সবুজ মিয়া বলেন, হকাররা সেতুর ওপর বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট বসানোর কারণে জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে পথচারীরা সেতুর মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলাচল করছে। এ অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যে যানবাহন নিয়ে চলাচল করা যায় না। সেতুর একাংশ বেদখল থাকায় চালকদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। সেতু থেকে হকারদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সেতুর আশপাশের এলাকার একাধিক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জানান, সেতুতে অস্থায়ী দোকানপাট থাকায় ময়লা-আবর্জনাও ছড়িয়ে পড়ছে সেতুতে। এ ছাড়া সেতুর প্রকৃত সৌন্দর্যও আড়াল হয়ে যাচ্ছে। সেতুর দক্ষিণাংশে সিলেটের সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনাল ও সিলেট রেলস্টেশন। এ সেতু দিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা মানুষের উত্তরাংশে; অর্থাৎ মূল শহরে ঢুকতে হয়। তাই সেতুটি হকারদের দখলে থাকায় বিষয়টি পর্যটকদের কাছেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে বলে অনেকে মতামত দেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেতু থেকে প্রায়ই হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সরিয়ে দেওয়ার পরও তাঁরা আবার সেখানে দোকানপাট বসান। এখন বিষয়টি আরও কড়াকড়িভাবে দেখা হবে বলে তিনি জানান।