Home জাতীয় প্রশাসনের ভেতরে বাইরে তৎপর রাজাকাররা

প্রশাসনের ভেতরে বাইরে তৎপর রাজাকাররা

26

উদ্দেশ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলা

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে রয়েছে রাজাকার-শান্তি কমিটি-আলবদর-আল শামসের পোষ্য ও দোষররা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক অঙ্গনে থাকা অভিন্ন আদর্শের লোকজন ও সমমনারা। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই প্রশাসনের ভেতর-বাইরের রাজাকারদের পোষ্য ও দোষররা সংঘবদ্ধ তত্পরতা জোরদার করছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের পোষ্যদের অনেকে ছলে-বলে-কৌশলে অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ঢুকে পড়েছে। এমনকি, টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়েছে শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের পোষ্যদের কেউ কেউ। সরকারি দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে নানা সুযোগ-সুবিধাও লুটেছে চক্রটি। বনেছে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক। ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই চক্রটি কোথাও কোথাও টাকার বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসাও চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে। অবৈধভাবে কামানো অর্থের একাংশ এখন তারা ব্যয় করছে সরকারকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্রে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে থাকা তাদের সম-আদর্শের-সমনাদের পকেটে যাচ্ছে সেই অর্থ। তাদের সংঘবদ্ধ তত্পরতার মূল্য লক্ষ্যই হচ্ছে—নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে বিপদে ফেলা।
একাধিক সূত্রের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মহলে থাকা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের পোষ্যরা অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনে থাকা অনুসারীদের কাছ থেকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বের করে নিচ্ছে। সেই সব তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে দেশে-বিদেশে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে থাকা বিভিন্ন মহলের কাছে। এমনকি, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী যে শোডাউন হচ্ছে, সেখানেও কৌশলে অর্থ ও লোকবলের জোগান দিচ্ছে চক্রটি। বিশেষ করে, খুলনা বিভাগে সম্প্রতি হওয়া সরকারবিরোধী জমায়েতে পরিচয় গোপন রেখে অংশ নেয় জামায়াত-শিবিরের সদস্য, কর্মী ও অনুসারীরা। কিন্তু, অর্থের বিনিময়ে সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি বাগালেও এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হলেও সেই অর্থের কিঞ্চিতাংশও চক্রটি সরকারের কিংবা সরকারি দলের কর্মসূচিতে ব্যয় করছে না।
যেটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যায় নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। যেই সংখ্যক লোকজনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল, লোকবল আনার দায়িত্বে যারা ছিল- তাদের মধ্যে কোথাও কোথাও ছিল শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের পোষ্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাতে লোকজনের প্রত্যাশিত জমায়েত হতে না পারে, সেজন্য দলের ভেতরে থেকেই ষড়যন্ত্র করেছে চক্রটি। নৌকা সাজিয়ে এবং বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও নিজেদের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট, ক্যাপ পরিয়ে কিছু লোক এনে তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতেই তত্পর ছিল বেশি। কিন্তু তাদের গোপন তত্পরতা ছিল বর্ণিল অনুষ্ঠানটিকে ম্লান করা।
তথ্য বলছে, রাজাকার-শান্তি কমিটি-আলবদর-আল শামসের পোষ্য ও দোষররা নানা কৌশলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়ে নিয়েছে, এখনো নিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার পর তারা টেন্ডারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মহলে থাকা অনুসারীদেরকে। একদিকে, নিজেরা যেমন প্রশাসনে থেকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন, আবার সরকারবিরোধী তত্পরতা চালাতে দরপত্রের কার্যাদেশ ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন সমমনাদেরকে। জানা গেছে, সরকারের জন্য এখন সব থেকে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমগ্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে থাকা রাজাকার-শান্তি কমিটি-আলবদর-আল শামসের পোষ্য ও দোষরদের এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের শত্রুদের এই সংঘবদ্ধ তত্পরতা। কারণ, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি সরকারকে বিপাকে ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে বহুমুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের নেতাদের প্রকাশ্যে ফুলের মালা দিয়ে আওয়ামী লীগে নেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও সন্ত্রাস-নাশকতায় বোমা মারার সময় হাতেনাতে ধরা পড়া জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের আওয়ামী লীগের নেতারা অর্থের বিনিময়ে তাদের সমর্থক ও সত্ হিসেবে সনদও দিচ্ছেন। এরপর তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ বা অন্য প্রগতিশীল দলের লোক হিসেবে। জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকেই রাজাকার-শান্তি কমিটি-আলবদর-আল শামসের পোষ্য ও দোষররা প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এতে অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে জামায়াতের সোর্স!: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সোর্স হিসেবেও কাজ করছেন জামায়াত-শিবিরের একশ্রেণির নেতা। আর এসব সোর্সের মাধ্যমেই জামায়াত-শিবির অনেক তথ্য পাচ্ছে। এমনকি জামায়াত-শিবিরের নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযানের তথ্যও আগে ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল গোপালগঞ্জে আবুল হায়াত মোল্লা নামে এক শিবিরকর্মীকে গ্রেফতারের পর তার কাছে তিন পুলিশ কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়। ঐ বছরের অক্টোবরে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের ওপর আক্রমণের পাশাপাশি জামায়াত-শিবির সক্রিয় পুলিশ কর্মকর্তাদের হিটলিস্ট করছে। পুলিশের ভেতরে সোর্স নিয়োগ করেই সরকারের আজ্ঞাবহ বা আস্থাশীল কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তবে এমন ‘সোর্স’ সিন্ডিকেটে কারা জড়িত তা বের করতে পারেনি পুলিশ।
ইত্তেফাক