Home জাতীয় পুড়ে ফেলছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ।।উপকূলীয় জনপদ রক্ষার সবুজ বেষ্টনী এখন হুমকির মুখে

পুড়ে ফেলছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ।।উপকূলীয় জনপদ রক্ষার সবুজ বেষ্টনী এখন হুমকির মুখে

32

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: উপকূলীয় জনপদ রক্ষার সবুজ বেষ্টনী এখন হুমকির মুখে। বারবার বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হতে বসেছে সাগর ঘেষা কুয়াকাটা সৈকতের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিশাল একটি অংশ। অসংখ্য মরা গাছ কঙ্কাল হয়ে কোনটা কাঁত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনটা সৈকতের বালিয়ারীতে পরে রয়েছে। এছাড়া দুষ্কৃতকারীরা বন উজাড়ের চেষ্টায় আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলছে সবুজ দেয়াল খ্যাত বড় বড় ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ। তবে এসব গাছের কোনটার শরীর আগুনে পুড়ে গেছে। কিন্তু কে বা কারা এই গাছ পুড়িয়েছে তা জানা নেই বনবিভাগের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা অন্যতম। এর মধ্যেই বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের রুদ্র-রোষের কারণে হারিয়ে গেছে মূল সৌন্দর্য। এরই মধ্যে সাগরে গিলে খেয়েছে সৈকতের সৌন্দর্য ফয়েজ মিয়ার ‘ফার্মস এ্যান্ড ফার্মস’ এর সারি সারি নারিকেল বাগান। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সৈকতের নানা প্রজাতির গাছ মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বর্ষা মৌসুমে। ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের বালুর স্তর মাত্রাতিরিক্ত নেমে যাওয়ায় কোন কোন গাছের শিকড় বের হয়ে মরে গেছে। ওইসব গাছ রেদ বৃষ্টিতে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এ এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় বাড়ছে ঝুঁকি। তবে হঠাৎ সৈকতে একাধিক গাছ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে পর্যটক ও পরিবেশ কর্মীরা হতবাক। তবে গাছগুলো মরে যাওয়ার পরে কে বা কারা এই গাছ পুড়িয়েছে তার সঠিক তথ্য বলতে পারেনি কেউ।
মহিপুর বনবিভাগের তথ্যমতে, গত অর্থ বছরে গঙ্গামতির সৈকতে ২৫ হেক্টর জমিতে ঝাউ গাছ রোপন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নদীর তীরে ৫০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ ও রাস্তার পাশে বনায়নের জন্য ৫০ সিকি কিলোমিটার গছের চারা রোপন করা হয়েছে। এবছর ১০ কিলোমিটার নতুন রাস্তায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়া লেম্বুরবন, ও কুয়াকাটা এলাকার ঝাউ, কেওড়া, বাইন, ইউক্লিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনায়ন করা হয়।
পর্যটক শহিদুল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটার আগের সেই সৌন্দর্য যেন ক্রমেই ম্লান হতে চলেছে। সৈকতের কোলঘেঁষা ‘কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান’ এখন পুরোপুরি হুমকির মুখে। এরই মধ্যে উদ্যানটির এক অংশ সাগর বুকে বিলীন হয়ে গেছে।
অপর এক পর্যটক মেহেদী হাসান বলেন, বনবিভাগের উচিৎ শিগগিরই যে সকল দুষ্কৃতকারীরা বন উজাড়ের চেষ্টা করছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে উপক‚লীয় পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ইসাহাক আলী বলেন, এক সময় ওইসব বাগানে ঢুকলে ভয়ে গা ছমছম কওে উঠতো। কয়েক বছর ধরে জঙ্গলের গাছগুলো শঙ্কাজনক হারে মারা যাচ্ছে। বেশকিছু বড় গাছ অনেকদিন আগে সৈকতে মরে পচে গেছে। সাগরের পাড় জুড়ে ছিল গুল্মলতায় ঘেরা। এখন ঝাউ বাগানও হুমকির মুখে রয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলে রহমান হাওলাদার বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে সাগরে মাছ শিকার করে আসছি। সৈকতের বড় গাছগুলো অনেকদিন আগেই মরে গেছে। তবে বেশ কয়েকটি গাছে হঠাৎ করে আগুন জ্বলতে দেখেছি। কাউকে কখনো আগুন দিতে দেখিনি।
মহিপুর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাছগুলো অনেকদিন আগে মরা যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছিলো। মারা যাওয়া গাছগুলো কিভাবে পুড়েছে তা তাদের জানা নেই। পোড়া গাছগুলো নজরে আসার পর এর কারণ বের করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, এর দায় বনবিভাগ এড়িয়ে যেতে পারে না। কারণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বনবিভাগের। যদিও মরা গাছে আগুন দেওয়া হচ্ছে, তার মানে অবশ্যই পাশে থাকা তাজা গাছগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে। এটা আমাদের পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি।