Home কুটনৈতিক ও প্রবাস পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ৯০ বাংলাদেশি জেলের

পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ৯০ বাংলাদেশি জেলের

31

ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ে পতিত ভারতের জলসীমায় আটকে পড়া বাংলাদেশের শতাধিক জেলে দেশে ফিরতে পারছেন না। এদের ১৭ জন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি এবং ৯০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। ভারতের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হওয়া সাগরে ভাসমান উদ্ধার বাংলাদেশের ৯০ জেলের কষ্টে দিন কাটছে। বাংলাদেশের পক্ষে কেউ তাদের খোঁজ নেননি। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা মৎস্য বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী ১৩ দিন ধরে কলকাতায় থেকে এসব জেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

এ বিষয়ে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তারা অবগত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, ভারতীয় জলসীমায় সাগরে উলটে ভাসছে এদেশীয় ডুবে যাওয়া অনেক ফিশিংবোট ও লাশ। ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করছে ভাসমান জাল ও গ্যাস সিলিন্ডার।

ভারতের কলকাতা থেকে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের’ সেক্রেটারি জয় কৃষ্ণ হালদার বুধবার সকালে মোবাইল ফোনে ইত্তেফাককে বলেন, উদ্ধার ৯০ জন বাংলাদেশি জেলে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের চারটি মত্স্যজীবী সমিতির তত্ত্বাবধানে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের দ্রুত স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে গত ২৫ আগস্ট কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে ৯০ জেলের নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এছাড়া গত শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আরেকটি স্মারকলিপি ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। জেলেদের উদ্ধারের পর ১০ দিন গত হলেও বাংলাদেশের পক্ষে কেউ জেলেদের খোঁজখবর নেয়নি বলে তিনি জানান।

পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপের অক্ষনগর সুন্দরবন মৎস্যজীবী সমিতির সেক্রেটারি অমল সেন দাস মোবাইল ফোনে বলেন, এখানকার জেলেরা সাগরে ভাসমান জাল এনে নদীর চরে রাখছে। বাংলাদেশি জেলেদের পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবী সমিতিগুলো থেকে সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হলেও তারা স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অনিশ্চয়তায় মানসিক কষ্ট নিয়ে দিন পার করছেন। বর্তমানে কাকদ্বীপে ৪৬ জন, কুলতলিতে ১৭ জন, মথুরাপুরে ১১ জন এবং কেনিং-২ ব্লকে রয়েছেন ১৬ জন বাংলাদেশি জেলে। এসব জেলেদের বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা জেলায় বলে জানা গেছে। এদের থাকা-খাওয়ার তত্ত্বাবধান করছেন পশ্চিমবঙ্গের চারটি মৎস্যজীবী সংগঠন।

পশ্চিমবঙ্গের সাউথ সুন্দরবন ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সেক্রেটারি হারাধন ময়রা, কাকদ্বীপ ফিশারমেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসেক্রেটারি মেঘনাথ দাস ও রায়দীঘি ফিশারমেন ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ট্রেজারার রবীন দাস দ্রুত বাংলাদেশি জেলেদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

গত ১২ আগস্ট নিম্নচাপজনিত ঝড়ে পড়ে অনেক জেলে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করলে তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তিন মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। এসব দণ্ডিতদের মধ্যে ফারুক মীর, হাফিজুর হরমান, শামসুল হক মাতুব্বর, আরিফ হোসেন প্রমুখের নাম জানা গেছে। মোস্তফা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, কলকাতা অবস্থানকালে তিনি ভারতে আটক ও আশ্রয় নেওয়া জেলেদের মুক্তি ও দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ডেপুটি হাইকমিশনে বারবার যোগাযোগ ও ধরনা দেন। কিন্তু সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিক বা কর্মচারীদের কোনো সহানুভূশীল আচরণ জেলেদের ব্যাপারে লক্ষ্য করা যায়নি।

দুইটি ট্রলারসহ ৩১ ভারতীয় জেলেকে আটক মোংলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় দুইটি ট্রলারসহ ৩১ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড। বৃহস্পতিবার বিকালে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের (ঢাকা) মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছিল ভারতীয় জেলেরা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টহলরত কোস্ট গার্ডের জাহাজ মনসুর আলী ট্রলার দুইটি আটক করে। ট্রলার দুইটি হলো এফবি মঙ্গল চান্দী-২৫ ও এফবি মঙ্গল চান্দী-০৩। তিনি বলেন, ভারতীয় জেলেরা কোস্ট গার্ডের জাহাজ দেখামাত্র দ্রুত ট্রলার চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ট্রলার ও জেলেদের বিকালেই মোংলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কোস্ট গার্ড।

মোংলা থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এই জেলেদের বিরুদ্ধে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন ও মত্স্যসম্পদ লুণ্ঠন আইনে মামলা দায়েরের পর শনিবার সকালে বাগেরহাট কোর্টে প্রেরণ করা হবে।
ইত্তেফাক