Home মতামত ঘরগুলি ধ্বসিয়া পড়িলঃ

ঘরগুলি ধ্বসিয়া পড়িলঃ

76

সাইফুল ইসলাম শিশির:
— স্যার! গত ১০টা বছর ধইরা রিকশা চালাই ঢাহা শহরে। মোড়ে মোড়ে দাঁড়ায়া চা-পুরি খাই, মাঝে মাঝে পুলিশের ঝাড়ি- প্যাদানীও খাই। পিণ্ডা খাটায়া দুইচার পয়সা কামাই। পাবলিক আমাগো ভাগ্য লক্ষ্মী। চাইলে এমনি দিবোনা। ভাড়া নিয়া নানা ক্যাচাল কইরবো। কিন্তু রিকশায় উইঠা দিল খোলা! লাখ লাখ টাকার বুদ্ধি দিবো- জ্ঞান দিবো, পয়সা লাগবো না। একদম মাগনা মাগনা।

বাহ! মজার বিষয় তো ! বিনা পয়সায় জ্ঞানার্জন!

— স্যার, আমি টালমাইরা থাকি। আলাপে আলাপে বুদ্ধির কেনাবেচা করি। মাইনসে চোখ বড় কইরা কয়, “বাদল এতো বুদ্ধি পাও কনে?” আজকা আপনার কাছে গুমোর ফাঁস কইরা দিলাম।

বুদ্ধি খরচ করতে পার। তবে টাকা পয়সা খরচ করে ফেলনা। আপদকালীন সঞ্চয় রেখ।

— স্যার, মাথা খারাপ! দু’এক কাপ চা-পুরি খাই। গাঁজা- ভাঙ্গ, নেশার মধ্যে বাদল নাই। পিণ্ডা খাইটা দুইডা পয়সা হয়, হাফ কেজি গরুর গোস্ত কিনা বউ- ঝি নিয়া খাই। পিণ্ডায় শান্তি আসে। মজাই আলাদা। এক হপ্তা প্যাডেল চালাই, দম ফুরায় না।

স্যার, হুনলাম এক নম্বরের কামও নাকি এবার বাও- বাতাস ছাড়াই ধ্বইসা পড়ছে। বহুদিন ধইরা শুইনা আইতাছি কারোরই নাকি কোন ক্ষমতা নাই। ক্ষমতা সব এক নম্বরের হাতে। তাঁকেই সবাই মান্য করে, ভয় পায়। তাঁর কাছে কোন দাবী পৌঁছাতে পারলে ব্যস! ন্যায্য হলে সেটা হবে। এভাবেই তো হয়ে আসছে। কিন্তু এবার কামডা হইল কী? ভয়ডর গেল কই?

কী হয়েছে ?

— স্যার, কী হয়নাই তাই বলেন? গরীব মাইনসের জন্য সরকার ঘর- বাড়ি বানায়া দিছে। দেশের গরীব মাইনসে ঘর পাইব, এটা খুশির খবর। আমি না পাই, কেউ না কেউ তো পাইব। তাতেই আমরা খুশি। কিন্তু —

কিন্তু আবার কী?

— স্যার সবাই আমারে জ্ঞানী কয়। জানি আমার সাথে হেরা একটু মশকরা করে। অনুমতি দিলে আমিও একটু মশকরা করতে চাই।

ঝটপট বলে ফেল।

— স্যার! আমি বোধ হয় জ্ঞানীই হয়ে যাচ্ছি। লক্ষ্মণ একটু বুঝা যায়। মাঝে মাঝে মুখ ফসকে শুধু ইংরেজি চইলা আসে “The Patient had died before the doctor came.

কী বুঝাতে চাও তাই বলো?

— পাবলিক ঘরে ওঠার আগেই ঘরগুলি ধ্বসিয়া পড়িল। ইংরেজিতে হ্যারে কয় Past perfect tense.


৮ আগস্ট, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
থানা রোড, সিরাজগঞ্জ- ৬৭০০