Home জাতীয় পেনশন ও রেশনিং এর দাবিতে ঢাকায় ক্ষেতমজুরদের অবস্থান

পেনশন ও রেশনিং এর দাবিতে ঢাকায় ক্ষেতমজুরদের অবস্থান

59

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের সমৃদ্ধি-উন্নতির যে দাবী করা হয় তার মূলে রয়েছে গ্রামের সাধারণ দরিদ্র মানুষের ঘাম-শ্রম আর ত্যাগ কিন্তু সভ্যতার এই কারিগররা রাষ্ট্রের নীতি আর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্রপতি থেকে একজন নিম্নতম সরকারি কর্মচারী পর্যন্ত চাকুরি শেষে পেনশন পেলেও যাদের শ্রম আর ঘামে এই সভ্যতা সেই দরিদ্র মানুষ কায়িক শ্রম দেয়ার ক্ষমতা হারালেই তাকে অন্যের দয়ার উপরে বেঁচে থাকতে হয়। কেউ যদি দয়া না করে বৃদ্ধ বয়সে তার ভাত জোটে না, চিকিৎসা-মাথা গোঁজার জায়গা থাকে না। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে গ্রাম শহরের গরিব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
৬০ বছর হলেই শ্রমজীবী মজুরদের পেনশন প্রদান, পল্লী রেশন চালু, গ্রামীন কর্মসূচি ও বরাদ্দ লুটপাট বন্ধের দাবীতে আজ ১৭ ডিসেম্বর’২২, শনিবার, সকাল ১১ টায় ঢাকা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা.ফজলুর রহমান। সমাবেশে কয়েকশ’ ক্ষেতমজুর ঢাকার আশপাশ থেকে যোগ দেন।
দাবির প্রতি সংহতি ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারি সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদ সাধারণ সম্পাদক ও সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এস এম আব্দুর সবুর, ঐক্যন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের অর্থ সম্পাদক ও গার্মেন্টস নেতা কাজী রুহুল আমিন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম আবু তাহের, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক নাজির হোসেন, বস্তিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি কুলসুম বেগম, কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ, শ্রমিক নেতা মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো.ফয়েজ উল্লাহ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল খান, পরেশ কর, রমেন বর্মন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, আব্দুর রউফ, খলিলুর রহমান বাঙালী, সুফিয়া বেগম, লোকনাথ বর্মন, প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সহ সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার বাপ্পী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতালেব হোসেন।
বিক্ষেভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুররা যতক্ষণ তাঁদের শরীরে শক্তি থাকে ততক্ষণ কাজ করে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু তাদের সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা নেই। ফলে তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন চালায়। এই মজুররা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন তারা চরম অনিশ্চয়তায় ভোগে। সরকারি চাকুরীজীবীদের অবসরের পর পেনশনের সুবিধা থাকলেও মজুরদের সে সুবিধা নেই। সারাজীবন দেশের জন্য পরিশ্রম করলেও শেষ বয়সে তারা চরম খাদ্যকষ্ট ও বিনা চিকিৎসায় থাকে। সংহতি বক্তব্যে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ দশক পরেও আমাদের শাসক গোষ্ঠী গ্রাম-শহর, ধনী গরিবের বৈষম্য দূর করতে পারেনি। সরকার যে মাথাপিচু আয়ের গল্প শোনায় সেই আয় কোথায়? ঢাকার রাস্তায় ট্রাকের পিছনে পাঁচ টাকা কমে এক লিটার তেলের জন্য এত লোকের ভীড় কেন? তাহলে এই মাথাপিচু আয় কোন মাথার উপরে গিয়ে পড়ছে? তিনি বলেন কেবল ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য সরকার রেশনিং ব্যবস্থায় না গিয়ে টোটকা চিকিৎসা দিয়ে রোগ সারতে চায়। তিনি সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, দেশটা লুটেরা-মজুদদার-কালো বাজারিদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। মিহির ঘোষ তার বক্তব্যে বলেন, গ্রামে সরকারি বরাদ্দ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। সামাজিব নিরাপত্তা কর্মসূচি ধনীদের পকেট ভারী করছে। এর বিরুদ্ধে ক্ষেতমজুর সমিতি গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করছে।
বক্তারা কাজ, মজুরি, জমি, অধিকার ইনসাফ নিশ্চিত করার দাবী করে বলেন, মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক ৬ কোটি ক্ষেতমজুরের মোটামুটি বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা না দিলে এই সভ্যতাকে তারা বার বার চ্যালেঞ্জ জানাবে। বক্তারা বলেন, আমরা যখন গ্রামীণ মানুষের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী করি, তার সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসার দাবী করি তখন সরকার বাজেটের অজুহাত দেখায়। কিন্তু ব্যাংক আইন পরিবর্তন করে একজন মানুষকে একটি ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে লোপাট এর সুযোগ দিতে কার্পণ্য করে না। গত ৫০ বছর ধরে বৈষম্য বাড়িয়ে এক দেশের মধ্যে শাসকগোষ্ঠী দুটি সমাজ সৃষ্টি করে ফেলেছে। গরিব মানুষ বেশী দামে জিনিস কিনে সরকারকে বেশি ট্যাক্স দেয় আর সরকার বড়লোকদের সেই টাকা চুরি করে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। বক্তারা ইনসাফ নিশ্চিত করে দেশের সিংহভাগ ÿেতমজুর সহ গ্রামীণ মজুরদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে ও লুটপাট বন্ধের জোর দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ ধনী-গরিব বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান। গ্রামীণ দুঃস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ ও একেবারেই নিঃস্ব, তাদের ৬০ বছর বয়স হলেই তাদেরকে মাসিক কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা পেনশন প্রদানের জোর দাবী জানান।