এম এইচ নাহিদ ।। “পদ্মা সেতু বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এটি আমাদের দেশের সক্ষমতার প্রতীক”-বললেন দক্ষিণ বাংলার কৃতিসন্তান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধিতে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনায় জাতীয় বামপন্থী রাজনীতির আইনকন মেনন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। তার দৃঢ়চেতা সাহসী নেতৃত্বে আজ পদ্মা সেতু করা সম্ভব করেছে। এই সেতু  কেবল বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ’ই দেয়নি, বাংলাদেশকে আরো আত্মবিশ্বাসী করেছে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের।”

জীবনন্ত কিংবদন্তী মেনন বলেন, “পাকিস্তানিদের বিশ্বাসঘাতকতার মুখে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’। তেমনি বিশ^ব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে ঋণ প্রত্যাহার করে নিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জুলাই ২০১২-তে একই সাহস নিয়ে বলেছিলেন, “আমাদের নিজেদের অর্থায়নেই আমরা পদ্মা সেতু করব।’ তিনি করে দেখালেন। সেদিন ওয়ার্কার্স পার্টির তরফ থেকে আমরা সমর্থন জানিয়েছিলাম। পরবর্তী বাজেট অধিবেশনে এই সংসদে আমি সেই সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলাম। অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত কিভাবে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন হবে তার নানা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। স্বেচ্ছাভিত্তিক অর্থ সংগ্রহের এক ধরনের গণজাগরণও সৃষ্টি হয়েছিল।”

তিনি বলেন, সেদিন সংসদের অনেকের মধ্যে টালমাটাল ও দোদুল্যমনতা আমরা দেখেছিলাম। অনেকেই বলেছিলেন, বিশ^ব্যাংককে আবার ফিরিয়ে আনতে। সব কিছুকে মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব করেছে।”

মেনন বলেন, ড. বারাকাত ও আমারও মতে বিশ^ব্যাংক নিজেই দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রের মাষ্টার। যে মুক্তবাজার অর্থনীতি দুর্নীতির জন্ম দিতে বাধ্য, তারা সেই অর্থনীতি দর্শনেরই প্রবক্তা। আমাদের দেশে যে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে, অর্থ পাচার থেকে শুরু করে সকল অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তপনা ঘটছে তা বিশ^ব্যাংক অনুসৃত নয়াউদারবাদী অর্থনীতির বিষময় ফলাফল। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবেন বললেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে বিশ^ব্যাংকে চিঠি দিতে বলেনছিলেন, ঠিক তখনই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মোজিনা যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের বাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এনভাবে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের ভয় দেখালেন।”

 মেনন আরো বলেন, “এইই ভয় ফারল্যান্ড সাহেব দেখিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুকে। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলাদেশকে বায়াফ্রায় পরিণত করতে পারে। এই ভয় দেখাতেই তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের অস্ত্র-অর্থ জুগিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছে। এই ভয় দেখাতেই কিসিঞ্জার সাহেব বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেট কেস বলেছিল। কিউবাকে পাট বিক্রির জন্য দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে পিএল-৪৮০-এর গমবাহী জাহাজকে মধ্য সাগর থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল। ক্লিনটনের কথামত গ্যাস রপ্তানিতে রাজি না হওয়ায় ২০০১-এ শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তন করা হয়েছিল। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে সেদিন সাহায্য করেছে, তেমনি ২১-শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার প্রাণনাশে তাদের সম্মতি ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।”

‘পদ্মা সেতু হোক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক’-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বামপন্থী এই নেতা বলেন, “পদ্মাসেতু হতে পারে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। কিন্তু বিএনপি-জামাতি-বামাতিরা সেটা হতে দিতে রাজি হয় নি। এখনো রাজি না। নানা দুর্নীতি-অপচয়-অপব্যয়ের নানা হিসাব দিচ্ছে। চেষ্টা করছে দেশের মধ্যে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের যেমন পারাপার করার বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, তেমনি মেনে নিতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে। যাদের কখনো রাজনীতিতে দেখা যায়নি; তারা এখন এমন ভাষায় কথা বলছেন, মনে হয় যেন খোদ স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের পিছনে আছে। কেউ সাত দিনের মধ্যে সরকার ফেলে দেয়ার কথা বলছেন। অর্থাৎ যা কিছু কর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই কর। কিন্তু পদ্মা সেতু আছে, থাকবে। খালেদা জিয়ার দুরাক্সক্ষা অনুযায়ী ভেঙে পড়বে না। শেখ হাসিনার গৌরব, দেশের গৌরব হিসেবেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।”

‘আমি দক্ষিণ বাংলার লোক’-জোরের সাথে এমন কথা বলে রাশেদ খান মেনন বলেন, “পদ্মা সেতুতে জাতীয় ক্ষেত্রে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ১.২৩ শতাংশ।

‘পদ্মা সেতুর সাথে জাতির আবেগ জড়িত’-এমন মন্তব্য করে বামপন্থী এই নেতা বলেন, “তার চেয়েও বেশি জড়িত দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার ৩ কোটি মানুষের আবেগ। প্রধানমন্ত্রী আপনি সেইসব মানুষের অভিবাদন গ্রহণ করুন। সমগ্র জাতির অভিবাদন গ্রহণ করুন।”