Home জাতীয় পদ্মাসেতু: গর্বের অন্তড়ালে……

পদ্মাসেতু: গর্বের অন্তড়ালে……

45

এম এইচ নাহিদ ।। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাওয়া পদ্মাসেতু আমাদের গর্ব। বিশ্ব ব্যাংক সহ বিশ্ব মোড়লদের নানা বাধা পেরিয়ে গর্বের এ সেতু নিজস্ব আয়ে নির্মাণ করে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ প্রমাণ করেছে বাঙালি যেমন রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পারে, তেমনি নিজেদের টাকায় বিশ্ব রেকর্ডও সৃষ্টি করতে পারে। বাঙালির গর্বের পদ্মা সেতু বিশ্ব রেকর্ডে রেকর্ডে ভরা। গর্বের অন্তরালে গর্ব। কি সেই রেকর্ড, জানলে অবাক হবেন!

পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরই অবস্থান পদ্মার। তারপরেও নদীশাসন, পাইল ও বিয়ারিংয়ের ব্যবহারসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে রেকর্ড করেছে পদ্মা সেতু। খরস্রোতা এ নদীর মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পাইল। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুতে এখনো এত গভীরে গিয়ে পাইল বসানো হয় নি। এ সেতুতে ‘‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত দুনিয়ার কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয় নি। ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া, এই সেতুতে ব্যবহৃত একেকটি বিয়ারিংয়ের ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয় নি।

পদ্মা সেতু নির্মাণে  ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি এসেছিল চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেনটি বাংলাদেশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। এজন্য মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির দাম দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিশ্বে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিলের ব্যবহার একসঙ্গে দেখা যায়নি।

বিশ্বের বহু দেশের নদীতে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী তীরের ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীরপুরের শিবচর।

 রেকর্ডে রেকর্ডে ভরা পুরো সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে মোট ২ হাজার ৭৬৮ দিন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, তাইওয়ান, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ-২০ টি দেশের সম্মিলিত মেধায় তৈরি আমাদের গর্বের সেতু।

এর নকশা তৈরি হয় হংকংকে। নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যাম, ব্যবস্থাপক অস্ট্রেলিয়ার কেন হুইটলার।

নির্মাণকাজের তদারকির নেতৃত্ব ছিলেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক রবার্ট জন এভস। আর নদীশাসনের নকশা প্রণয়ন করেন কানাডার ব্রুস ওয়ালেস। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১৩৮ ব্যক্তি। পদ্মা সেতুতে ১০টি দেশের বিপুল উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু না কিছু উপকরণ ব্যবহার হয়েছে আরো প্রায় ৫০টি দেশের। বাংলাদেশের বাইরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি উপকরণ কেনা হয়েছে চীন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মূল সেতুতে প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার টন স্টিলের প্লেটের পুরোটাই এসেছে চীন থেকে। দুই প্রান্তের উড়াল পথ সহ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।