স্টাফ রিপোটার ।। “টোল তো ঢের বেশি”-স্বপ্নের পদ্মাসেতু পারাপারে টোল নিয়ে এমন মন্তব্য যেমন আছে, তেমনি ঘন্টা পর ঘন্টা অপেক্ষা আর জীবনের ঝুঁকি ও সীমাহীন ভোগান্তির চেয়ে একটু বেশি ভাড়া হলেও সহজে যাওয়া অনেক ভালো’-এমন মন্তব্যও মানুষের মুখে মুখে। আবার কেউ কেউ বলছে, “মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং সময়ের সাথে সাথে টোল তো একটু বাড়বেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, “ফেরি পারাপার হতে যে ভোগান্তি, সময় ও অর্থের ব্যয় হতো সে তুলনায় পদ্মাসেতুর টোল খুব বেশি ধরা হয় নি।” তবে এ কথা সত্য যে পদ্মাসেতুর কারণে যানবাহনের রাস্তার দূরত্ব কমবে, সময় বাঁচবে, যেকোনো পরিবহন আগের তুলনায় বেশি ট্রিপ মারতে পারবে। তাছাড়া নদীপথে ফেরিতে জীবন ও সম্পদের যে ক্ষতির শঙ্কা তা থেকে অনেকটা নিরপাদ পারাপার হবে সেতু। ফলে ফেরির চেয়ে সেতু পারাপারে একটু টোল বেশি হলেও তা আমলে নিচ্ছে না দক্ষিণ বাংলার মানুষ। তাদের বক্তব্য বাঁচবে সময়, মিলবে অসহনীয় ভোগান্তি থেকে মুক্তি। আর অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘টোল একটু কমানো বিবেচনা করাই যেতে পারে। তবে এই সেতুর কারণে দক্ষিণ বাংলার মানুষের কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে উন্নতি হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে-তাতে এ টোল তারা আগ্রহভরেই দিবে।

জানাগেছে, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যে টোল নেওয়া হবে তা ফেরির চেয়ে ৪২ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ বেশি। ফেরিতো টোল লাগতো যানবাহন ভেদে ৭০ থেকে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। আর সেতু পারাপারে টোল লাগবে ১০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। সেতুতে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে মোটর সাইকেল ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০ টাকা, পিকআপ এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস এক হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাস (৩১ আসন বা এর কম) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসনের বেশি) দুই হাজার টাকা এবং বড় বাস (তিন এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ছোট ট্রাক (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (পাঁচ থেকে আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (আট থেকে ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (চার এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আর চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারের ক্ষেত্রে প্রতি এক্সেলে দেড় হাজার টাকা যোগ হবে।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যানবাহন যাতায়াত করে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া, মাঝিকান্দি ও বাংলাবাজার ফেরিঘাট দিয়ে। এখানে ফেরিভাড়া মোটরসাইকেল ৭০ টাকা, কার বা ছোট জিপ ৫০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৮৬০ টাকা, বড় জিপ ৮০০ টাকা, পিকআপ ৯৮০ টাকা, মিনিবাস এক হাজার ২০০ টাকা, মাঝারি বাস এক হাজার ৭১০ টাকা, বড় বাস দুই হাজার ৩১০ টাকা, ট্রাক (তিন থেকে পাঁচ টন) এক হাজার ৮০ টাকা, ট্রাক (আট টনের ওপরে) এক হাজার ৮৫০ টাকা এবং ১০ চাকার পণ্যবাহী ট্রাক তিন হাজার ৯৪০ টাকা।

 টোলের এই হার দেখে অনেকে বলছেন, এই টোল অতিমাত্রায় বেশি হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, টোল যতই বেশি হোক, সময় তো লাগবে ৩ ঘন্টার জায়গায় মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট। সকালে ঢাকা গিয়ে কাজ সেরে বিকালেই বাড়ি ফিরতে পারব। ফলে খরচ একটু বেশি হলে সমস্যা কি?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘পদ্মা সেতুর টোলের হার ঠিক আছে। এতে মানুষ যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি পচনশীল পণ্য পরিবহনেও ঝুঁকি কমবে। ’ তারা বলেন, বাসের ভাড়া খুব একটা বাড়বে না, যদি বিআরটিএ সঠিকভাবে বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়াটা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তারা আরো জানান, ফেরিঘাটে টোলের বাইরে অদৃশ্য অনেক খরচ আছে। যেমন-লম্বা সময় ঘাটে আটকে থাকলে পরিবহনকর্মীদের একাধিক বেলা খাবারের খরচ হয়। আগে ফেরিতে ওঠার জন্য অবৈধভাবে অর্থ খরচ করতে হয়। সেতুতে তা হবে না। সেতুতে খুব বেশি থামতে হবে না। এমনকি সিস্টেমের মধ্যে থাকলে থামতেই হবে না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল কেটে নেওয়া হবে। সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। ফলে সময় বাঁচবে অনেক।

তাছাড়া ঢাকা থেকে ঢাকা থেকে সড়কপথে খুলনার দূরত্ব প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করলে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ১৯০ কিলোমিটার। ৬৫ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোরের দূরত্ব বর্তমানের ২১২ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমে যাবে। দূরত্ব কমে যাওয়া এবং জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় বাসের ভাড়াও কমা উচিত। বাস মালিকদেরও সে বিষয়টি ভাবতে হবে। তাছাড়া এখনকার চেয়ে বেশি ট্রিপ মারতে পারবে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে হবে, যাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা ভাড়া না বাড়াতে পারে। তাহলে টোল বেশি তা মনেই হবে না।