Home রাজনীতি নেতাদের চাপে ফেস্টুনে ঠাঁই হয়নি উন্নয়নের!

নেতাদের চাপে ফেস্টুনে ঠাঁই হয়নি উন্নয়নের!

33

স্টাফ রিপোটার: নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুরুতে বিরোধী দলের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘শান্তি সমাবেশ’ নাম দিয়ে কর্মসূচি পালন করত ক্ষমতাসীন দল। তবে প্রায় আড়াই মাস আগে সেই কর্মসূচির নাম পাল্টে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। দলটি এখন ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ নামে এই কর্মসূচি পালন করছে। সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার জোর চেষ্টা ক্ষমতাসীনদের। তবে নেতাদের একাংশ নিজেদের তুলে ধরতে গিয়ে ফেস্টুন থেকে বাদ দিচ্ছেন উন্নয়নচিত্র।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের’ আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন নেতারা এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর ব্রিজমুখী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যেন সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
সমাবেশের দুই দিন আগেই মূল সড়কের এক পাশে সাঁটানো হয়েছে বড় ও মাঝারি আকারের ফেস্টুন। এসব ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবি দেখা গেছে।
কেউ কেউ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের ছবি দিয়েও ফেস্টুন করেছেন।
তবে নিজের ছবি বড় করতে গিয়ে এবং নেতাকর্মীদের ছবি দিতে গিয়ে অনেক নেতার ফেস্টুন থেকেই বাদ গেছে সরকারের উন্নয়নচিত্র।
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফুল ইসলাম ঝলকের সাঁটানো ফেস্টুনে কোথাও সরকারের উন্নয়ন চিত্র নেই। নিজের ছবি বড় আকারে দিয়ে দলীয় শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন করেছেন এই নেতা।
একই কাজ করেছেন মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের ছবি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে স্বাগত জানিয়ে বেশ কিছু ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। ফেস্টুনে সমাবেশটিকে ‘শান্তি সমাবেশ’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর কোথাও সরকারের উন্নয়ন চিত্রের দেখা নেই। এমনকি পুরো ফেস্টুনজুড়ে ‘উন্নয়ন’ শব্দও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল মান্নান মিয়ার নামে সাঁটানো বিশাকালার ফেস্টুনে সরকারের একটি উন্নয়ন চিত্রও দেখা যায়নি। তার বদলে দেখা গেছে নিজের ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের বিশাকার ছবি।
নিজের ছবি ও পরিচয় দিয়েই ফেস্টুন সাজিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. মমতাজ হোসেন। আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ-সমাজকল্যাণ ও মানবসম্পদ সম্পাদক হলেও তার ফেস্টুনে জায়গা পায়নি আওয়ামী লীগের উন্নয়ন।
কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. হাবিব মোল্লার ফেস্টুনেও উন্নয়নের চিহ্নমাত্রও দেখা যায়নি। দেখা গেছে দলীয় অভিভাবকদের ছোট ছোট আর নিজের বিশালাকার ছবি।
এমন শত শত ব্যানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কাঁচপুর ও এর আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে।
এদিকে ব্যানার-ফেস্টুন নিজেদের ছবি দিয়ে সয়লাবের চিত্র নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে ২০১৫ সালে একটি নির্দেশও জারি করেছিল আওয়ামী লীগ।
দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে; যাতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ছবি থাকছে। অথচ সেখানে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি খুব ছোট আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা দেশের সাধারণ মানুষের নিকট দৃষ্টিকটু। সুতরাং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যতীত অন্য কারও ছবি থাকলে সেই সব বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন সরিয়ে ফেলানোর জন্য সারা বাংলাদেশে আপনার সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ প্রদানের আহ্বান জানানো হলো।’
এরপর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরও বারবার এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের ব্যানার-ফেস্টুনে নিজেদের ছবি এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
গত জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় ‘শান্তি সমাবেশ’ নাম পরিবর্তন করে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ নামকরণ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি সমাবেশে সরকারের উন্নয়ন কাজ তুলে ধরার আহ্বান জানান।
দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ সে বিষয়টি অনুসরণ করলেও উন্নয়নের বদলে আত্মপ্রচারেই বেশি মনোযোগী এখনো অনেক নেতা।