Home সারাদেশ নিষিদ্ধ মাদকে ছয়লাব শাহজাদপুর!

নিষিদ্ধ মাদকে ছয়লাব শাহজাদপুর!

28

মাহবুবুল আলম, সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিড্রিলে! অভিনব কৌশলে এলাকায় রমরমা নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা চালিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে এলাকার প্রতাপশালী একটি চক্র। মাঝে মধ্যে প্রশাসন দু’একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দু’চারজনকে গ্রেফতার করলেও শাহজাদপুরে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মাদকব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সোর্স পরিচয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে নিয়মিত মাসোহারাও তোলা হচ্ছে। সোর্সদের নিয়মিত টাকা ও মাদকদ্রব্য দিলে অভিযানের আগেই মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয় তারা।’ ফলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানও মাঝে মধ্যে ভেস্তে যাচ্ছে। এদিকে, শাহজাদপুরে নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াবহ বিস্তারে এলাকার অভিভাবকমহল চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞমহলের মতে, ‘শাহজাদপুরে নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিতপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় মাদকের ভয়াবহতা ও সুদূরপ্রসারী ক্ষয়ক্ষতির করায়াত্ব থেকে কোনভাবেই শাহজাদপুরবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদী অধ্যুষিত কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপাচিল এলাকার ৭/৮ জন পাইকারি ও খুচরা নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ গ্রাম থেকে আগে পুরো উপজেলায় সর্বনাশা ইয়াবার চালানের যোগান দেয়া হলেও বর্তমানে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে প্রকারভেদে প্রতিপিছ ইয়াবা ৬০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত ও খুচরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকে নদীপথে আবার অনেকে ইয়াবা বহনের কাজে কোমলমতি ছাত্র ও নারীদেরও ব্যবহার করে রমরমা এ অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা ও কাকিলামারী এবং দুর্গম চরাচিথুলিয়া এলাকা থেকে আমদানী নিষিদ্ধ ভারতীয় মাদক ফেনসিডিল পুরো উপজেলায় অতি গোপনে সরবরাহ করা হয়। প্রতিপিছ ফেনসিডিল পাইকারি ২৫’শ থেকে ২৬’শ টাকা ও খুচরা ৩৫’শ থেকে ৩৮’শ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দাম অনেক বেশী হওয়ায় ধনাঢ্য ও ভিআইপি মাদক সেবীরা এ মাদক সেবন করছে। এছাড়া উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ গাঁজা। এক টোপলা ( ছোট কাগজের প্যাকেট) গাঁজা ১০০ টাকা ও সাড়ে ১২ গ্রাম গাঁজা ৬০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, এলাকায় হেরোইরসেবীদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকায় চুরির ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ১ পুরিয়া হেরোইন ১০০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। গত ১ মাসে শাহজাদপুর পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য চুরি হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শাহজাদপুর পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর, ইসলামপুর (রামবাড়ী), বিসিক বাসস্ট্যান্ড, দিলরূবা বাসস্ট্যান্ড, কান্দাপাড়া, শক্তিপুর, দ্বাবারিয়া, নলুয়া, বাড়াবিল, মণিরামপুর, শান্তিপুর, হালুয়াঘাট, ঋষিপাড়া, নবকুমার সেতুর আশপাশ, কাকিলামারী, গঙ্গাপ্রসাদ, দরগাহপাড়াসহ উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের যদুর জোলা, কালাইবিল, চৌচিরের কাউয়াক বাথান এলাকা, রাউতারা সুইচ গেট সংলগ্ন বাঁধ, চরাচিথুলিয়া, কাকিলামারি, মাদলা, নুকালী, আলোকদিয়ার, বাঘাবাড়ী উত্তর ও দক্ষিণপাড়, কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু, সড়াতৈল, কাশিনাথপুরসহ গাড়াদহ ইউনিয়ন, নরিনা, বেলতৈল, হাবিবুল্লাহনগর, কৈজুরী, জালালপুর, খুকনী, পোরজনা, গালা, রূপবাটি এমনকি যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল সোনতনী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিড্রিল। এসব নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য সেবন করে একদিকে যুবসমাজ ধ্বংশের দিকে ধাবিত হচ্ছে ও অন্যদিকে মাদকসেবীদের পরিবারও ব্যাপক সম্মানহানী ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এলাকার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী ও ডিলারদের আমরা গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছি। এছাড়া নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানও পরিচালনা করছি। প্রায় প্রতিদিনই আমরা মাদক ব্যবসায়ী ও ছিচকে চোরদের গ্রেফতার করছি। আর সোর্সদের বিষয়ে আমরা আরও সতর্কাবস্থা অবলম্বন করেছি।’
অন্যদিকে, শাহজাদপুরে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ভয়াল থাবায় ও এসব মাদকে শাহজাদপুর ছয়লাব হয়ে যাওয়ায় এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড অতীতের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে এলাকাবাসী প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।