Home জাতীয় নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে

নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে

17

স্টাফ রিপোটার: নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করতে উত্তরাধিকারে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার এটি শুধু আজকের দাবি না, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যেই নিহিত। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ সব কথা বলেন তারা। বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, ল’ কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান আবেদা সুলতানা, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার সাবরিনা জারিন, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার তানিয়া আমীর ও বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ সুমী।
বৈঠকে ড. মিজানুর রহমান বলেন, নারীরা নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত। আজও কেন এত নারীরা ভূমিহীন? শুধুমাত্র আইন পরিবর্তন বা সংশোধন যথেষ্ট হবে কিনা, তা নিয়ে ভাবার দরকার। আইন পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনী সহায়তা কিভাবে দেওয়া হবে, সামাজিক আন্দোলনে পরুষের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা কেমন হবে, কিভাবে পরুষদের সম্পৃক্ততার বৃদ্ধি করা যায়, এই সকল বিষয়ে আরো চিন্তা করতে হবে।
বিচারক আবেদা সুলতানা বলেন, এখনো আইনে যেটুকু আছে সেটুকুও নারীকে প্রদান করা হয় না। নারীদের তার নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করাসহ সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যারিষ্টার সাবরিনা জারিন বলেন, বৈষম্যমূলক উত্তারাধিকার আইনটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবর্তন না হওয়ার পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মন মানসিকতাই দায়ী। আর নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন সরাসরি পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার না থাকার বিষয়টি জড়িত।
ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরাও সমানভাবে অবদান রেখেছেন। তাহলে নারীর অধিকার কেন সমান হবে না? স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও দেশে ১৯৩৭ সালের আইন বহাল রয়েছে। তাই উত্তারাধিকার আইনসহ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী আইনগুলো পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি।
ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, সব আইন সংবিধানের আলোকে তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র এই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে না। অবিলম্বে অভিন্ন ও সার্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণষন ও চালু করে নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করার পথ সুগম করার আহ্বান জানান তিনি।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পারিবারিক আইনটি প্রণীত হয়েছে। তা এখনো কার্যকরী আছে। যা নারীর জন্য বৈষম্য ও নির্যাতনের উৎস্যে পরিণত হয়েছে। অথচ সংবিধান হচ্ছে, সর্বোচ্চ আইন। যেখানে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই সর্বজনীন পারিবারিক আইন দ্রুত প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমানাধিকার দিয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের নারীসমাজকে ব্যাপক বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের মূলস্তম্ভ উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা। যা সমাজ-রাষ্ট্রে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনসহ চলমান বিভিন্ন উপসর্গের মূল কারণ। এই সংকট মোকাবেলায় নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সৃদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।