ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে রাজনীতি উধাও হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, রাজনীতি থেকেই গণতন্ত্রের জন্ম।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সংলাপে তিনি এই মন্তব্য করেন। ইসি আয়োজিত ধারাবাহিক সংলাপে গতকাল বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ অংশ নেয়। তবে চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই সংলাপ বর্জন করে।
বিকল্পধারার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক হলেই যে অবিচার বা ভোট চুরি বন্ধ হবে তা কিন্তু না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ভারসাম্য তৈরি হয়। বড় দলগুলোর কর্মী-সমর্থকেরা ইসির কাজটাকে সহজ করে দেন। ইসির কার্যক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ইসির সমালোচনা করতে হবে। কোন কাজ ঠিক হয়নি, তা নির্ধিদ্বায় বলতে হবে।
নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধে রাজনৈতিক দলের পরামর্শ আহ্বান করে সিইসি বলেন, ‘অর্থশক্তিকে আমরা কীভাবে সামাল দেব? আপনারা আমাকে একটা বুদ্ধি দেন। দেশে অর্থ বেড়েছে। আমাদের সবার বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকা। এই অর্থ আমরা নির্বাচনে ব্যয় করি। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করব কীভাবে?’ ইসিতে জমা দেওয়া প্রার্থীর নির্বাচনি খরচের হিসাবের সঙ্গে প্রকৃত খরচের মিল থাকে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ৫ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে গোপনে ৫ কোটি টাকা খরচ করলে কীভাবে ধরা সম্ভব? এর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইভিএমের ইতিবাচক দিক বর্ণনা করে সিইসি বলেন, লাঠি দিয়ে, হকিস্টিক দিয়ে, ইভিএম মেশিনটা ভেঙে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এখানে ভোটের নড়চড় হবে না। তিনি বলেন, ‘সমস্যাগুলো বুঝে নিয়ে আমরা কীভাবে একটু ব্যালেন্স করে একটি অর্থবহ যত দূর সম্ভব নিরপেক্ষ, যত দূর সম্ভব দুর্নীতিমুক্ত একটি নির্বাচন করা যায় সেই চেষ্টা করব।’
ইসির ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর একটু আস্থা রাখুন। চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না। নজরদারি থাকতে হবে। আমরা কি আসলেই সাধু পুরুষ, না ভেতরে ভেতরে অসাধু।’
সিইসি আরো বলেন, ‘২০১৮ সালের যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, এবার ওভাবে নির্বাচন হবে এটি আপনারা আশা করবেন না। আমরা সেটি (২০১৮-এর নির্বাচন) জানিও না, দেখিওনি। নির্বাচন আইন অনুযায়ী হবে। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অংশের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’
বিকল্পধারার ৭ দফা প্রস্তাব : সংলাপে অংশ নিয়ে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এমপির নেতৃত্বে ১১ সদস্যদের প্রতিনিধিদল এই প্রস্তাব তুলে ধরে। এতে বলা হয়েছে, সব কেন্দ্রে ইভিএম, নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি না করা, প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ, ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা, কেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, পেশিশক্তি ঠেকাতে প্রতি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর কমপেক্ষ ৫ জন সদস্য মোতায়েন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল গণনা ও প্রার্থীর এজেন্টদের হাতে তুলে দেওয়া ইত্যাদি।
নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকার চায় জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার দাবি করেছে। তারা বলেছে, ধর্মহীন ও জনপ্রিয়তা নেই এমন দলের নিবন্ধনও বাতিল করতে হবে। দলটির পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবের মধ্যে আরো রয়েছে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচন-পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন; ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ, প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা; স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান বাতিল ইত্যাদি।
এনপিপির ১৬ দফা প্রস্তাব : এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সংলাপে অংশগ্রহণ করে। সংলাপে অংশ নিয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবিসহ এনপিপির দলটির পক্ষ থেকে ১৬ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে তপশিল ঘোষণার পর কোনো রাজনৈতিক মামলা না দেওয়া, বিনা মূল্যে ভোটার তালিকা সরবরাহ, রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটের আগে প্রত্যাহার, স্বাধীনতাবিরোধী ও দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, ইভিএম ব্যবহার করলে পেপার ট্রেইলর সংযুক্ত করা ইত্যাদি।
ইত্তেফাক