Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের বড় দূর্বলতা অভ্যন্তরীণ কোন্দল !

নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের বড় দূর্বলতা অভ্যন্তরীণ কোন্দল !

470

জাবি প্রতিনিধি: রাত পোহালেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন । শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা । সশীরে সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে প্রচারণা গড়িয়েয়েছে অনলাইনে মাধ্যমেও। ফেসবুক রিল থেকে শূুরু করে ইমেইল পাঠানো সবকিছু মিলে শিক্ষকদের মধ্যে এক নির্বাচনী উৎসবের আবহ বইছে। দীর্ঘ পনের বছর ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের জন্য জয় পাওয়া একদিকে কিছুটা ইতিবাচক হলেও আরেকদিকে বড় দূর্বলতা হয়ে দাড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

এ কোন্দল প্রকাশ্যে না দেখা গেলেও ভোটের মাঠে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে এবারে নির্বাচন করছেন কিন্তু পূর্বে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আছে এমন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। যদিও সংগঠনটিতে কোন্দলের কথা অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারে নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬১৩ জন। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নেন প্রায় ২৮০ থেকে ৩০০ জন শিক্ষক। বাকিদের মধ্যে বিএনপিপন্থী শিক্ষক, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ এবং বামপন্থী শিক্ষক মিলে মোট প্রায় ২০০ জন শিক্ষক আছেন। এর বাইরে সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের মধ্যে পুরনো ও নতুন বেশকিছু কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে বলে দলটির কয়েকজন নেতা ও একাধিক কর্মীর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিস্তারিত আলাপকালে ক্ষুব্ধ সদস্যরা জানান, নতুন উপাচার্য নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থাকা, এর প্রায় ৬-৭ মাস পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনেই সীমাবদ্ধ থাকা ও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে শীর্ষ দু-একজন নেতার অনুসারীদের পদায়ন, পদায়নকৃতদের মধ্যে নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগ ও একটি অংশকে কোণঠাসা করে রাখা এসব কারণে তারা ক্ষুব্ধ। উপাচার্যকে বলতে না পারার কারণ হিসেবে তারা অভিযুক্তদের উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হওয়া ও দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকাকে দায়ী করছেন।

সার্বিক অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ দুজন শিক্ষক গণমাধ্যমে নাম বক্তব্য দিতে সম্মত হয়েছেন তবে নাম প্রকাশ করলে পরে রোষানলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন। এজন্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বক্তব্য দেন তারা। তাদের একজন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ও আরেকজন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ঐ শিক্ষক বলেন, প্রায় দুবছর আগে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ সংলগ্ন ভবন থেকে স্থানান্তরিত হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা ক্লাসরুম সংকট নিরসনের জন্য উপাচার্যের কাছে উক্ত ভবনের আবেদন করলেও দীর্ঘদিন কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলে নি। অতি সম্প্রতি সে ভবন হস্তান্তরের কথা শুনেছি। এরকম অনেক বিষয় আছে। সবকিছু তো আর বলার মত নয়। ভোটাররা এর প্রভাব ফেলবেন ভোটে।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক অধ্যাপক পদমর্যাদার আরেক শিক্ষক বলেন, আমরা কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে বের হয়ে যেতে দেখেছি। জাতীয় নির্বাচনের মত বিষয় সামনে রেখে তারা আলাদা হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কারণ তারাও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের বড় পদে ছিলেন। তবে সার্বিক বিষয় দেখে দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ও সবার মতামতের গুরুত্ব দেওয়ার অভাব স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্যানেল নির্বাচনে যোগ্যতার চেয়েও দুয়েকজন ব্যক্তির মনোনীতদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। তারা মনে করছেন আগামীতে ভিসি প্যানেল নির্বাচনে সেই দুয়েকজন ব্যক্তির জয় নিশ্চিতে দলকে ব্যবহার করা হয়েছে। সার্বিক এসব ব্যাপার শিক্ষক সমিতির গত নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। কালকের জন্যও আশঙ্কা হয়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘একটা দল বড় হলে অভন্তরীন ছোট খাট সমস্যা থাকেই।
আমরা এক ব্যক্তির জন্য একপদ সৃষ্টি করেছি, এমন নয় যে কয়েক পদে একজন বসে আছে। পদ যেহেতু কম সে ক্ষেত্রেতো সবাইকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। তবে যাদের এখন পদ নেই আগামীতে আরো বিভিন্ন ফোরামের নির্বাচন আছে, সেগুলোতো তাদেরকে বিবেচনা করা হবে। নেতৃত্ব আসলে অর্জনের বিষয় সে ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্ত্বা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করেই আসলে পদে লোকজন দেয়া হয়। আমরা আসলে সবাইকেই মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি, কাউকে অবমূল্যায়নের চিন্তা করি না। তাই আমরা আশা রাখি সবাই সব কিছু ভুলে ‘ বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদকে’ বিজয়ী করাবে।’