Home মতামত ‘দ্বিতীয় সত্বা’

‘দ্বিতীয় সত্বা’

72

পলাশ কলি হোসেন শোভা : খুব বেশী দেরী হয়ে গেলো কি?নিজকেই প্রশ্ন করে হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে নাহ্! তেমন একটা নয়। চেম্বার ঢুকতেই আড়চোখে আসাদউল্লাহ্ দেখে নেয় তিন জন পেশেন্ট ওয়েট করছে।

মনু মিয়া কে ডেকে বললো। আজ আর বেশি পেশেন্ট নিও না তিন জনই থাক্ মনু মিয়া ঘাড় কাত করে সায় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আসাদ ঠিক ঠাক করে বসতেই শুনতে পেলো

★ মে আই কাম ইন স্যার?
আসাদ মাথা নেড়ে মোবাইলে সময় দেখে নেয়। জ্বী বলুন আপনার কি প্রবলেম।চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলো তিরিশ বএিশ বছর হবে ছেলেটার। কিন্তু খুবই চিন্তিত । আসাদ বললো,

  • কি করেন আপনি কত দিন ধরে সাফার করছেন? আসাদ এর মনে হলো ছেলেটি কে তো সুস্থই মনে হচ্ছে। তবে বেশ কঠোরতা চেহারায়।

★ আমার কিছু হয়নি স্যার
_ তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?আসাদ নিজেই প্রশ্ন টা করে বোকা হয়ে যায় তার মতন একজন মনোবিশারদ তো এভাবে বলতে পারে না, মনে মনে লজ্জিত হয় আসাদ।
★ আমার ওয়াইফ কে নিয়ে সমস্যায় আছি।
_ জ্বী বলুন আমি শুনছি বলেই কাগজের মধ্যে আকাআকি করতে থাকে আসাদ।
তিনমাস হলো আমি বিয়ে করেছি। খুব চঞ্চল আর হাসিখুশি ছিলো মিতু। আমাকে সব অদ্ভুত সব কথা বলতো।ও স্যার আমার পরিচয়টা বলতে ভুলে গেছি৷ আমার নাম কাদের, ফিল্মের এক নামকরা প্রোডাকশন হাউজে কাজ করি। তেমন কাজ নয় পরিচালক অভিনয় কারীদের ফুটফরমাস খাটি। সারাক্ষণ কাজ করার পর মেজাজ আর ঠিক থাকে না। সব সময় রাজ্যের বিরক্ত লেগেই থাকে।
_ আহা আপনি আপনার ওয়াইফের প্রবলেম গুলো বলেন।

★ ছেলেমানুষী স্যার একদম ছেলেমানুষী। ধরেন খাটে শুয়ে আছি দুজনে, বলে বসবে, ইশ্ এটা যদি ময়ূরপঙ্খি নাও হতো তবে নদীতে ভাসতে ভাসতে কোথায় চলে যেতাম। মজা হতো না? আবার হয়তো কখনো বলে বসবে,তুমি আর আমি যদি ঝুম বৃষ্টি তে ভিজতাম কতই না মজা হতো। স্যার আমার খুব বিরক্ত লাগে ওর এসব কথায়।
_ কেন? আপনার তো ভালো লাগার কথা
_ আমি ছাপোষা চাকরি করি, কাঠখোট্টা মানুষ আমি।
_ তো এখন কি হয়েছে?সমস্যা টা কি? মেয়েরা তো ইকটু কল্পনা প্রবন আবোগময় হয়ই। তার উপর নতুন বউ। কাদের সাহেব আপনি মানিয়ে চলুন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার কাছে আসার তো কোন প্রয়োজনই দেখছি না।

★ আসল কথাই তো বলিনি, প্রায় এক মাস আগে মিতু ওর স্টাডি রুমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। চিৎকার শুনে ওকে সুস্থ করি। জানতে পারি ও আমাকে দুজায়গায় দেখছে। আমি বিছানায় শুয়ে আছি আবার একই সময়ে আমি স্টাডি তে বই পড়ছি। এটার কি ব্যাখ্যা স্যার আপনিই বলেন? সেইমিতু আর নেই চুপচাপ বসে থাকে, আর কি সব বলে।
আসাদ মনে মনে বললেো ভেরী ইন্টারেস্টিং ।
_ কাদের সাহেব আপনি কোথা থাকেন? আপনার ওয়াইফ এর সাথেই বাসায় সিটিং দিতে চাই।

★ স্যার তাহলে তো খুব ভালো হয়। কবে আসবেন? আমি থাকবো।ও স্যার আমি কিন্তু বই পড়তে খুব অপছন্দ করি। আর মিতু বিয়ের পর তার গল্পের সব বই এনে ছোট একটা স্টাডি রুম বানিয়েছে, আর আমাকেই ওখানে দেখেছে কিভাবে সম্ভব?
_ আপনি আমার এ্যাসিস্টেন এর কাছে ঠিকানা রেখে যান কাল এগারোটায় আমি আসবো।
আরো দুটো পেশেন্ট দেখা শেষ করে বেশ রাত করে বাসায় আসলো, আসাদ জানে ডুয়েল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারস এখানেও তাড়া করবে তাকে। একসময় ঘুমিয়ে যায় সে।
তেজগাঁও এর কাছে খুব সাধারণ একটা টিন শেড বাড়িতে কাদের থাকে মিতু কে নিয়ে। বাইরের পরিবেশের সাথে ভেতরটা মেলাতে পারেনা আসাদ। দুরুমের বাসাটাতে ড্রইং রুমের এক কোনায় ছোট্ট স্টাডি কর্ণার। ছিমছাম পরিছন্ন। আসাদ বুঝতে পারে মিতু নামের মেয়েটা সৌন্দর্য প্রিয় সৌখিন।
মিতু কে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত।
আসাদ কাদের কে রুম থেকে চলে যেতে বলে শুরু করে এভাবে, কি করছিলেন মিতু?

± কে আপনি? কাদেরের বন্ধু ? কিন্তু কাদের তো কাউকে বাসায় আনো না।
_ আমি আপনার কাছে এসেছি আপনার মামা পাঠিয়েছে।
মিতু মামার কাছে মানুষ । ওনারাই বিয়ে দিয়েছে কিন্তু গত তিন মাসে তো মামা কোন খোঁজ নেয়নি। তবে আজ কেন?
_ আসাদ বলে,মিতু আপনি যে কাদের সাহেব কে একই সময়ে দুজায়গায় দেখেন আমায় বললেন কি, কি দেখেন?_ আসাদা লক্ষ্য করে মিতু বারবার টেবিলে রাখা বইটির দিকে তাকাচ্ছে। আসাদ বইটি হাতে নিয়ে বলে, ” মোঘল হেরেমের অন্তরালে “। পড়েছেন? আমি অনেক আগে পড়েছিলাম।কাহিনি টা কি যেন ছিলো?
± মিতু খুশি মনে বলে, ঐ যে মোগল সম্রাটদের হেরেমে নর্তকী আর সম্রাজী , উপপত্নীদের নিয়ে সব ফ্যান্টাসি।
আসাদ বুঝে ফেলে এই মারাত্নক ফ্যান্টাসিতে মিতু নিজেও আনন্দ পায়।
ও হা বলুন মিতু

  • মাস খানেক আগে শুয়ে আছি ঘুমিও ছিলাম।হঠাৎ খটমট শব্দে আসছে। ইজি চেয়ারে বসলে যেমন শব্দ হয় তেমন।ঘুম ভেঙে বুঝতে পারি স্টাডি থেকে শব্দ আসছে। পাশে কাদের গভীর ঘুম। আমি আলতো করে ওকে ডাকতে চাইলাম ওর কোন সাড়া নেই। এক সময় আমি নিজেই পাশের রুমে গিয়ে দেখি কাদের মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। আমার আর কিছু মনে নেই। পরে শুনি কাদের আমাকে বিছানায় নিয়ে আসে।
  • তারপর ও কি এমন হয়েছে?

± উদস কন্ঠে মিতু বলে। প্রতি রাতেই আমার ঐ একই সময়ে ঘুম ভেঙে যায় আমি সম্মোহনী ভাবে স্টাডি তে গিয়ে বসি। জানেন কাদের আমার সাথে অনেক গল্প করে। দেখলেই বলবে,ওহ্ মিতু এসেছো বসো।একনাগাড়ে অনেক কথা বলে যায় মিতু। আসাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না কিছু।
মিতুর স্বপ্নের যে মানুষ টা তার কল্পনায় বসবাস করতো বিয়ের পর তার স্বপ্ন ভঙ্গ হবার কারনেই সে নিজের মত আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে।আর ঐ বইটাই তাকে ঐ অসম্ভব অবাস্তব পৃথিবীতে ঘোরাচ্ছে।

কাদের কে সে পেয়েছে একজন কঠিন কট্টর মানুষ হিসেবে যে বৃষ্টি তে ভিজতে অপছন্দ , সমুদ্র দেখতে যাওয়া বিলাসিতা জোসনায় গা ভাসিয়ে গল্প করা অবাস্তব মনে করে তার কাছে মিতুর আর কি বা চাওয়ার আছে! পাওয়া তো দুস্কর।
কড়া রোদের বের হয়ে পড়ে আসাদ।এর সমাধান কি ভাবে দেয়া যায়?এই মুহূর্তে মিতুর জন্য একধরনের কষ্ট অনুভব করতে লাগলো আসাদ।-লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ‍্যাপক, মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।

*মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখাই লেখকের নিজস্ব ব্যক্তিগত বক্তব্য বা মতামত।