Home সারাদেশ দৌলতপুরে পুণ:খনন করা হিসনা নদী প্রভাবশালীদের দখলে : সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ...

দৌলতপুরে পুণ:খনন করা হিসনা নদী প্রভাবশালীদের দখলে : সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ

63

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মৃতপ্রায় হিসনা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য খনন করা হয়। প্রায় ৩০ বছর পর গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদী পুণ:খনন করা হয়। যার গভীরতা হওয়ার কথা ছিল ৩০ফুট আর নদীর দুইপাড়ে প্রশস্ত হওয়ার কথা ছিল ৬৫ ফুট কিন্তু তার কোনটি করা হয়নি। সেসময় নদী খনন কাজের উদ্ভোধন করেন কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্। কিন্তু বছর না যেতেই খনন করা হিসনা নদী চলে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে এবং সেখানে তারা মাছ চাষ শুরু করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ৬৪জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুন:খনন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি বাঁধবাজার হতে হিসনাপাড়া পর্যন্ত ৮কিলোমিটার হিসনা নদী খননে ব্যায় ধরা হয়েছিল ৭কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ছিল নদী খনন শেষে জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ দখলমুক্ত, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ সহ নদীর প্রবাহ ঠিক রেখে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক গতিধারা সচল রাখা। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খনন করা নদীর প্রবাহ বা গতিরোধ করে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। মহিষকুন্ডি বাঁধবাজার হতে হিসনাপাড়া পর্যন্ত ৮কিলোমিটার হিসনা নদীর প্রায় সবটুকু অংশ নেট বা জাল দিয়ে দখল করা হয়েছে মাছ চাষের জন্য। এমনকি যেখানে ব্রিজ আছে সেখানেও মাটি দিয়ে উঁচু করে পুকুরের মত পাড় বেঁধে রাখা হয়েছে। যা দেখে যেন মনে হচ্ছে হিসনা নদী এখন পুকুরে পরিনত হয়েছে। ফলে নদী খননের কোন সুফল ভোগ করতে পারছেন না নদীর তীরবর্তী সাধারন মানুষ ও এলাকাবাসী।
নেট বা জাল দিয়ে ঘেরা বাঁধের ছবি তোলার সময় মাছের ঘের রÿণাবেÿনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এগিয়ে আসেন এবং তারা ছবি তোলার কারন জানতে চান। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে তারা নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তারা বলেন, নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েছি কারন নির্দিষ্ট স্থান জলাশয় ভাগ করে মাছ চাষ করার জন্য। যাতে করে একজনের চাষকরা মাছ অন্য জনের দখলীয় অংশে না যেতে পারে। তারা আরোও বলেন, যখন যে ক্ষমতায় আসেন তখন তাদের লোকজন মাছ চাষ করে থাকেন এ নদীতে। এখানে সাধারণ মানুষের বলার কিছু নেই এবং করারও কিছু নেই।
পুণ:খনন করা হিসনা নদী দখল করে মাছ চাষের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার হোসেন আহমেদ স্বপন জানান, নদীটি ইজারা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। যেহেতু হিসনা নদী আপনার উপজেলায়, তাই ইজারা দেওয়া হলে বিষয়টি আপনার জানা উচিৎ ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
নদী খনন ও দখলের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাক্কীর আহমেদ অসন্তোষ্টি প্রকাশ করে জানান, নদীর গভীরতা হওয়ার কথা ছিল ৩০ ফুট আর নদীর দুইপাড়ে প্রশস্ত হওয়ার কথা ছিল ৬৫ ফুট। বাস্তবে তা সবক্ষেত্রেই হয়েছে অর্ধেক। ফলে সুফল পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সর্ব সাধারণ ও সুফলভোগীদের। আবার তা দখলে করে মাছ চাষও শুরু করেছে এলাকার প্রভাবশালীরা। পূর্বে যা ছিল, খননের পরও একই অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল জাব্বার বলেন, সরকারি খাল ও নদী মাছ চাষ করার জন্য জেলা থেকে বছর বছর ইজারা দেওয়া হয়। হিসনা নদীটিও খননের পূর্বে ইজারা দেওয়া হতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমানে কি অবস্থা তা তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
হিসনা নদী তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের দাবী খননকরা হিসনা নদী দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হোক।