Home জাতীয় দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা ও গৃহের সঠিক তথ্য নেই

দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা ও গৃহের সঠিক তথ্য নেই

40

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতি বছর দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে গৃহ। পরিবর্তন আসছে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে। কিন্তু গত এক যুগে জনশুমারি বা আদমশুমারি হয়নি দেশে। নিয়মিত আদমশুমারি না হওয়ায় দেড় কোটির বেশি মানুষ থাকছে চাহিদা নিরূপণের বাইরে। বারবার শুমারির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও পিছিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ করোনা মহামারি আর ট্যাব কেনায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় কয়েক দফা পিছিয়ে যায় ষষ্ঠ জনশুমারি।

প্রতি ১০ বছর পরপর জনসংখ্যার সঠিক হিসাব পেতে জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১১ সালের পর ১২ বছর পার হয়ে গেলেও জনশুমারি ও গৃহগণনা করা যায়নি। দেশে কী পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, কী পরিমাণে আমদানি হচ্ছে তার তথ্য রয়েছে। কিন্তু মোট জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি কি না তা দেখতে আদমশুমারির প্রয়োজন। এতে সংশ্লিষ্টরা সমস্যা সমাধানে একটি উপায় বের করতে পারবে।

এ অবস্থায় আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এবারই প্রথম দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের শুমারিতে জিআইএস বেইজড ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে ট্যাবের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানান, তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রত্যেক গৃহ, খানা ও ব্যক্তির তথ্য ট্যাবলেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লি.-এর টায়ার ফোর সিকিউরিটি সমৃদ্ধ ডেটা-সেন্টার ব্যবহার করা হবে। সংগৃহীত তথ্য এনক্রিপটেড হওয়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে।

দেশে সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ১৭ লাখ। এরপর আর কোনো আদমশুমারি হয়নি। প্রচলিত নিয়মে পাঁচ বছর পরপর এ শুমারি হওয়ার কথা। নতুন শুমারি না হওয়ায় ২০১১ সালের শুমারির ভিত্তিতে ২০১৬ সালের জনসংখ্যার প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ কোটি ৬২ লাখ। ঐ শুমারি অনুযায়ী প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে। এ হিসাবে ২০১৭ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮৫ লাখ, ২০১৮ সালে ১৭ কোটি ৮ লাখ, ২০১৯ সালে ১৭ কোটি ৩১ লাখ, ২০২০ সালে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ২০২১ সালে ১৭ কোটি ৭৯ লাখ এবং ২০২২ সালে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৩ লাখ। এর সঙ্গে আরো আছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বেসরকারি হিসাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। সরকারি হিসাবে ১১ লাখ। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মনে করে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, জনশুমারি পিছিয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ ছিল কোভিড-১৯। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা করার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ট্যাব কিনতে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর সেটি আমরা বাতিল করি। এ কারণেও পিছিয়ে গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আমরা নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এ জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বেশ কয়েক বার ঘুরতে হয়েছে। সেখানে সময় লেগেছে। এরপর আমরা নতুন করে দরপত্র আহ্বান করি। সেখানে বিট করেছে দেশি কোম্পানি ওয়ালটন। এখন তারা ট্যাব সাপ্লাই দেবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আরো জানান, গত মার্চ মাসেও আমরা তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। এবার ১৫ থেকে ২১ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করি, এই দফায় আমরা জনশুমারি সম্পন্ন করতে পারব।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। পরবর্তী সময় ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বার দেশে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়। জনশুমারির বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে শুমারি শুরুর আগে অর্থাৎ আগামী ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের সঠিক চাহিদার যেমন তথ্য নেই, তেমন উৎপাদনের সঠিক তথ্যও নেই। যা পরিকল্পনা গ্রহণে বড় বাধা। এতে যে কোনো মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কার্যক্রম নেওয়া বা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। এতে পরিকল্পনা ভুল হবে। কাজেই তথ্যের সঠিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদমশুমারি বড় ভূমিকা রাখবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি হিসাবেই যেহেতু এখন জনসংখ্যা ১৮ কোটি ৩ লাখ তাই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার হিসাব করতে হবে এর ভিত্তিতে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পণ্যের চাহিদা নিরূপণ করা হচ্ছে সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরে। এখানেই ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বাইরে থাকছে দেড় কোটির বেশি মানুষ। ফলে উত্পাদন, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত পণ্য থাকলেও বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনসংখ্যার তুলনায় চাহিদায় বরং ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এতে চাহিদার সংকট হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আদমশুমারির মাধ্যমে সঠিক জনসংখ্যার তথ্য নিশ্চিত হলে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রকৃত চাহিদা নিশ্চিত হওয়া সহজ। সেই চাহিদার অনুপাতে সমাধান করা সহজ হবে।-ইত্তেফাক