ডেস্ক রিপোর্ট: বৃহস্পতিবার বিডা’র মাল্টিপারপাস হলে বিডা ও সুইসকন্টাক কর্তৃক আয়োজিত “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট (বিআইসিআই) প্রোগ্রাম” এর সাত পর্বের সিরিজের প্রথম কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) –এর নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) জনাব লোকমান হোসেন মিয়া একথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্ত্যবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার কোন বিকল্প নেই। চীন ভিয়েতনাম, সিংগাপুরের দিকে তাকালে দেখা যায় তাঁরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করতে পেরেছে। এখন আমাদেরও এই প্রযুক্তির বেনিফিট নিতে হবে। আমরা বর্তমানে বিডা ওএসএস এর মাধ্যমে ৩৮ সংস্থার ১১৩ বিনিয়োগ সেবা প্রদান করছি এবং দ্রুতই ৪৮ সংস্থার ১৫০ টি বিনিয়োগ সেবা প্রদান করব। প্রযুক্তির মাধ্যমে সবসেবা দ্রুত প্রদান করা গেলে আমরাও চীন ভিয়েতনাম, সিংগাপুরের মত বিনিয়োগকারীদের দ্রুত সেবা দিতে পারব। আর এর জন্যই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট (বিআইসিআই) এর অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং সংস্থার সদস্যদের মধ্যে আন্তঃ-সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। এসময়ে তিনি আরো বলেন আমাদের মনে রাখতে হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ কোন দেশের ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট দেখেই বিনিয়োগ করতে আসেন। গত ১৫ বছরে যে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের এখন বিনিয়োগে প্রযুক্তির বেনিফিট নিতে হবে।

দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মশালায় বিডার নির্বাহী সদস্য ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মার্কাস এহমান, টিম লিডার, প্রবৃদ্ধি প্রকল্প (লোকাল ইকোনোমিক ডেভোলপমেন্ট ) সুইসকন্টাক, বিডার নির্বাহী সদস্য মিজ মোহসিনা ইয়াসমিন, অভিজিৎ চৌধুরী ও মোঃ খাইরুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের টিম লিডার মার্কাস এহমান বলেন, “বিডা-র সাথে যৌথ সহযোগিতায় আমরা মিউনিসিপ্যালিটি কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (এমসিআই) কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এই এমসিআই, বিআইসিআই প্রোগামের আওতায় অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে”। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নীত করণের মাধ্যমে টেকসই স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে সর্বোপরি পৌরসভাগুলোর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য যে, ব্যবসা বাণিজ্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানগত উন্নতি অর্জনের লক্ষ্যে, বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) প্রোগ্রাম স্থগিত করার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইমপ্লিমেন্টেশন অফ ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস (এনসিএমআইডি) বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় বিডা বর্তমানে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট (বিআইসিআই) প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে। বিআইসিআই প্রোগ্রাম – এর অধীনে সাতটি পিলারের আওতায় ১১০টি চিহ্নিত সংস্কারকে অন্তর্ভুক্ত করে, প্রতিটি পিলারের বিভিন্ন কর্মসূচীর তত্ত্বাবধানের জন্য সাতটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। পাশাপাশি, এই প্রোগ্রামের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘প্রবৃদ্ধি’ স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিডা-কে বিআইসিআই প্রোগ্রাম-এর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে। প্রবৃদ্ধির এই সহায়তার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী সব পৌরসভার ব্যবসার পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে বিআইসিআই প্রোগ্রাম -এর বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। যা মিউনিসিপ্যালিটি কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (এমসিআই) বাস্তবায়নে বিডা -র বিআইসিআই প্রোগ্রামে প্রবৃদ্ধি প্রকল্পটি সহযোগিতা করবে। এমসিআই সারা বাংলাদেশে পৌরসভাগুলোতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মূল্যায়ন, ব্যবসা পরিচালনার সহজতা এবং পৌর পর্যায়ে অর্থনৈতিক শাসনের কার্যকারিতা পরিমাপ করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি, ব্যবসায়িক অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে অগ্রগতি নিরীক্ষণের জন্য একটি মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। এটি সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।

আজকের কর্মশালায় বিআইসিআই প্রোগ্রাম – এর অগ্রগতি ও এর সাতটি পিলার সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিআইসিআই প্রোগ্রাম -এর পাঁচটি পিলারের সাথে প্রাসঙ্গিক এই এমসিআই প্রণয়ন ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে এই কর্মশালায় আলোকপাত করা হয়। কর্মশালায় বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবনা ও এমসিআই প্রণয়ন নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে সেগুলো টাস্ক ফোর্সে জমা দেওয়া হবে।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্টাক্টের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন প্রবৃদ্ধি প্রকল্পটি বর্তমানে দেশের সাতটি পৌরসভায় (শিবগঞ্জ, যশোর, ভৈরব, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও কক্সবাজার) স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করছে।