Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের

দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের

36

ডেস্ক রিপোর্ট: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের সব খাতে। বেড়ে গেছে প্রায় সব পণ্যের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে শুধু পরিবহন খরচই নয়, উৎপাদন ব্যয়ও আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। এমনিতেই দেশে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তেলের বাড়তি মূল্যের কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এবার দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গত শুক্রবার রাতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা দাম ৮০ টাকা থেকে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। লিটার প্রতি অকটেন ৮৯ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ৬৮ বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোল ৮৬ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৪ টাকা, অকটেনের ৪৬ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বেড়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঘাতে দেশে এখন প্রায় সব পণ্য ও সেবার দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, বিস্কুট, নুডলস, সাবানসহ নিত্য দিনের খাবার ও ব্যবহৃত পণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি। অথচ আয় সেভাবে বাড়ছে না। ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেও দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন আট শতাংশের ওপরে। এমন অবস্থায় সীমিত আয়ের মানুষ শুধু মাসিক খরচই কমায়নি, সঞ্চয়ও ভেঙেছে। এর মধ্যেই গত জুনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ও খরচ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে এলো এবারের তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা।

ইতিমধ্যে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সব ধরনের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী মিনিবাস ও বাস উভয় ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজধানীতে আসা কাঁচা সবজিসহ পণ্যবাহী গাড়িগুলোর খরচ বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে নিত্যপণ্যের বাজার বিশেষ করে সবজির দামও বেশি গুনতে হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি আরো উসকে দেবে মূল্যস্ফীতিকে, কষ্ট বাড়বে সীমিত আয়ের সব ধরনের মানুষের। চলমান পরিস্থিতিতে তেলের দাম বাড়ানো খুবই চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। এর প্রভাব আমাদের কৃষি, পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। আর এতে ভুক্তভোগী হবেন সাধারণ মানুষ। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর তেলের ব্যবহার-বিক্রি প্রায় ১০ শতাংশ বাড়ে। তবে করোনার প্রভাবে গত দুই বছরে সে হারে বাড়েনি।

বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছরে তেলের ব্যবহার ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে গড়ে পাঁচ-ছয় শতাংশ বেড়েছে। যে খাতে তেলের ব্যবহার যত বেশি সেই খাতে এর প্রভাবও তত বেশি হবে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এত বেশি বাড়ানো ঠিক হয়নি। ধাপে ধাপে বাড়ালে সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় হতো।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের এই দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে। এর প্রভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। কারণ, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অনেক মানুষ দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্র হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ইত্তেফাক