Home জাতীয় তিস্তার অকাল বন্যা বিপর্যয়ের শিক্ষাঃ হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না

তিস্তার অকাল বন্যা বিপর্যয়ের শিক্ষাঃ হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না

41

ডেস্ক রিপোর্ট: অকাল বন্যা বিপর্যয়ে বাংলাদেশের নদী তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষের অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে। হাজার-হাজার বসত বাড়ী বন্যার তোড়ে বিলীন হয়েছে, লাখ-লাখ একর জমির ফসল ভেসে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে বৃহত্তর রংপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর মাসের পর এরকম বন্যা দেখা যায় না।

শনিবার আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, তিস্তার উজানে অতিবৃষ্টির কারণে উজানে ভয়াবহ প্লাবন দেখা দেয়। তার তোড় সামাল দিতে না পেরে পশ্চিম বংগের গজল ডোবায় তিস্তার উপর নির্মিত ব্যারেজের সব ফ্লাডগেট খুলে দেয়ায় এ বন্যা বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যা বিপর্যয়ে তিস্তার উজানে ১৭ জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গেছে। কিন্তু এ বিপর্যয়ের ব্যাপারে ভাটির দেশ বাংলাদেশকে সতর্ক করা হয়নি। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও গজল ডোবা ব্যারেজের কারনে পানি-বঞ্চিত বাংলাদেশে তিস্তা ছিল এক শুকনো বিরানভূমি।

এদিকে বিগত তিন দশকেও তিস্তা নদী-ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তাবিত চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছেনা। শুকনো মওসূমে বাংলাদেশে তিস্তা এখন এক মরা নদী। মানুষ পায়ে হেঁটে এপাড় ওপাড় যাতায়াত করতে পারে। গজল ডোবা ব্যারেজের তলানি থেকে সামান্য পানি আসে। অথচ বর্ষা মওসূমে প্রতিবছর নেমে আসে ভয়াবহ বন্যা। এক হিসেবে বলা হয়েছে ২০২১ সালে তিস্তায় ৫ দফা বন্যা হয়েছে।

গত সপ্তাহের অকাল বন্যা বিপর্যয়ে প্রাথমিক হিসেবে ৮০ হাজার পরিবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে পাকা ধান, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, গবাদিপশুর খাদ্য, বসতবাড়ি, পরিধেয় কাপড়, সংরক্ষিত শীতবস্ত্র, তৈযষপত্র এক কথায় সর্বস্ব। এ অসহায় অবস্থা থেকে তিস্তা পাড়ের তিন কোটি মানূষের জানমাল রক্ষা এবং এ নদীর অববাহিকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে। হাত গূটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার চীনের সহায়তায় যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা সময়োচিত মনে করি।

যদিও এই পরিকল্পনা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করে নদীকে জীবিত রাখার প্রচেষ্টার বিকল্প নয়, তবুও বন্যা ভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও সমন্বিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এই প্রচেষ্টা সফল হতে পারে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে উজানে যখন পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনার তাগিদ আসবে তখন বাংলাদেশের তিস্তা অংশ নতুন জীবন ফিরে পাবে।

আইএফসি নেতৃবৃন্দের সুপারিশ, উল্লেখিত মহপরিকল্পনাকে আরেকটু বাড়িয়ে বাংলাদেশে তিস্তার পুরনো মূল অববাহিকায় অবস্থিত আত্রাই, করতোয়া এবং পুনর্ভবা নদী চলনবিলসহ এর আওতায় আনা গেলে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। আশে পাশের এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসবে এবং সকল নলকুপ সারাবছর সচল থাকবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন আইএফসি, নিউ ইয়র্ক-এর চেয়ারম্যান, আতিকুর রহমান সালু, মহাসচিব, সৈয়দ টিপু সুলতান, আইএফসি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ড এস আই খান, সাধারণ সম্পদক সৈয়দ ইরফানুল বারী, এবং আইএফসি সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার।