Home রাজনীতি ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে তিন দিনের রোর্ডমার্চ শুরু

ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে তিন দিনের রোর্ডমার্চ শুরু

15

স্টাফ রিপোটার: তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর পক্ষ থেকে আজ ২১ এপ্রিল ২০২৪ সকাল ১১টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে তিন দিনব্যাপী ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে রোর্ডমার্চ-এর উদ্বোধন করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। উদ্বোধনী সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নদী ও পানি গবেষক, বিশিষ্ট সাংবাদিক শেখ রোকন, বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী ও কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।
রোডমার্চের উদ্বোধনকালে কমরেড ফিরোজ বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকীর মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা, দেশের ভিতরে সরকারের নতজানু নীতি ও দখল-দুষনের ফলে এক সময়ের ১২০০ নদী আজ ২৩০ এ নেমে এসেছে এবং নদীর চেহারা খালে পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশংকাজনকভাবে কমে ৮০০ কিউসেকে নেমে গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় বাংলাদেশ অংশে কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হত তা কমতে কমতে ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার পথে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শুধু তিস্তা নয় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ৫৪টি নদীর ৫১টিতে ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লংঘন করে পানি প্রত্যাহার করছে। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা সকলের জানা আছে। সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীর উজানে বরাক নদীর টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে ভারত জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কার্যত সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের খড়্গ মাথায় ঝুলছে। ভারতের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা বাংলাদেশ অনিবার্যভাবে মরুভূমির দেশে পরিণত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের শাসকগোষ্ঠী তাদের হীনস্বার্থে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কখনো পানি সমস্যাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। কখনো সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নামে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। একই ভাবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকে কার্যত ভারতের পানি আগ্রাসনকে সমর্থন যুগিয়েছে। শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। ভারত একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের সরকার কোন কার্যকর প্রতিবাদ করছেনা। পানির নায্য হিস্যার জন্য আন্তর্জাতিকভাবেও সমাধানের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো সত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কেউই কর্ণপাত করছে না। শাসকশ্রেণির দলসমূহের ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোন কিছুই গুরুত্ব পায় না।’
তিনি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানান।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে শেখ রোকন বলেন, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে এসে সমঝোতা স্মারক করলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিভিন্ন সময়ে এসে প্রায় ৩৫ বার প্রতিশ্রæতি দিয়ে অনেক কিছু নিয়ে গেলেও তিস্তাসহ পানির ন্যায্য হিস্যাদর চুক্তি করলেন না।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিস্তা চুক্তি করতে না পারলে জনগণকে আন্দোলনের মাধ্যমেই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে এবং নতজানু সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মিছিল করে তোপখানা রোড, পল্টন মোড় ঘুরে সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে রক্ষিত মাইক্রোবাস যোগে রোডমার্চ যাত্রা করে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বিকেল ৫টায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন চত্তরে সমাবেশ শেষে রোডমার্চ বগুড়া গিয়ে রাত্রিযাপন করবে। আগামীকাল ২২ এপ্রিল রোডমার্চ বগুড়া থেকে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে রংপুরে রাত্রীযাপন করবে এবং তৃতীয় দিন ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টায় রংপুর প্রেসক্লাব থেকে মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, বড়ভিটা, জলাঢাকা, ভাদরুদরগা, ডিমলা, শুটিবাড়ী, তিস্তা ব্যারেজ ঘুরে ডিমলা শহীদ মিনারে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে এবং সমাপনী সমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।