Home সারাদেশ জাল সীল-স্বাক্ষরে চাকুরী হতে অব্যাহতি-সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী।

জাল সীল-স্বাক্ষরে চাকুরী হতে অব্যাহতি-সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী।

149

মহশীন আলী, রংপুর অফিস: ঠাকুরগাঁওয়ে জাল সীল-স্বাক্ষরে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষিকা রিনা আক্তার।

আজ সোমবার (২২মে) দুপুরে এ বিষয়ে জেলা শহরের টিএফসি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অসহায়ত্ব ভাবে ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে লিখিত বক্তব্যপাঠ করে সহকারি শিক্ষিকা রিনা আক্তার বলেন- জেলা সদরের চিলারং ইউনিয়নের আরাজী পাহাড়ভাঙা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে এবং বিগত শিক্ষা অফিসারের সীল-স্বাক্ষর জাল করে তাকে বাদ দিয়ে আব্দুস সবুর নামীয় এক ব্যক্তিকে অবৈধভাবে চাকুরী পাইয়ে দিতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তব্যরত ব্যক্তিগণ।

তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে নিয়োগ পত্র পাওয়ার পর ২৮ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়য়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি চাকুরী করে আসছিলাম। উক্ত স্কুলের ৩০০ ফিটের মধ্যে আরেকটি স্কুল হওয়ায় আরাজী পাহাড়ভাঙ্গা বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরাজী পাহাড়ভাঙ্গা আদর্শ বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করাকে নিয়ে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দবিরুদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসিরুল ইসলাম এবং আমাকেসহ আরো তিনজন শিক্ষকের নামে মোট পাঁচজনকে বিবাদী উল্লেখ করে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, ঠাকুরগাঁওয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

২০১৭ সালের ২৩মার্চ আরাজী পাহাড়ভাঙ্গা আদর্শ বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করা হয়। পরে আমি নিয়মিতভাবেই বরাবরের মতো বিদ্যালয়ে গেলে হঠাৎ একদিন কোন কারণ না উল্লেখ করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক লায়লা বানু আমাকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়। তারপরেও বাধা প্রদানের কারন জানতে চাইলে তারা জানান, আমাকে তারা নাকি চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন।

কেন অব্যাহিত দেওয়া হলো এই মর্মে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ প্রদান করি।
অভিযোগটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমলে নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে আমার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে আমাকে অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট অতিরিক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি জানান( অভিযোগকারী রিনা আক্তার জানতে চাইলে), উক্ত বিদ্যালয়ে আব্দুস সবুর নামেও একজন শিক্ষক আছেন। সে কারনে নাকি আমি(রিনা আক্তার) অতিরিক্ত শিক্ষক। আব্দুস সবুরের নিয়োগ ও যোগদান সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতীর মাধ্যমে হয়েছে, সে অবৈধ শিক্ষক এবং আমি বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এমন বক্তব্য প্রমাণসহ তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বারবার বলার পরেও তিনি(তদন্তকারী কর্মকর্তা) কোন অজানা কারনে আমার বক্তব্য গ্রহণ করেনি।

পরবর্তীতে নিরুপায় হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে ঠাকুরগাঁও সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা বানু, সভাপতি নাসিরুল ইসলাম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, স্কুল কমিটির সহ-সভাপতি সিদ্দিকুল ইসলাম, বিতর্কিত শিক্ষক আব্দুর সবুর, কমিটির সদস্য কুতুব আলী, সদস্য আনোয়ার হোসেনসহ ২২জনকে বিবাদী করে বিজ্ঞ আদালত একটি মামলা আনয়ন করি।

মামলা করার পর জানতে পারি উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা বানু, আজিজা বেগম, রিতা আক্তার, আব্দুর সবুর আদালতে যে নিয়োগপত্র ও যোগদান পত্র জমা দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভূয়া ও মিথ্যা। তাদের নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্রে যে সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে তা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম এর নয়। প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সভাপতির যোগসাজসে তারা সীল ও স্বাক্ষর জাল করেছে। তাছাড়া
আদালতে ২০০৪ সালের ৮এপ্রিল প্রধান শিক্ষক লায়লা বানু, আজিজা বেগম উক্ত বিদ্যালয়ের রেজ্যুলেশনে নিয়োগ কমিটির সদস্য বোর্ডে তাদেরকে দেখানো হলেও ঠিক তার সাত দিন পর আবার তারাই একই বিদ্যালয়ে নিয়োগ পায়।

শিক্ষা অফিসারের সীল-স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি আমি চলতি বছরের ২২মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করে কোন সমাধান না পেয়ে আবারো ৭-মে একই দপ্তরে পুন:রায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সুরাহা পাচ্ছি না।

রিনা আক্তার আরো বলেন, আমার মামলার বিবাদীরা আদালতের জবানবন্দীতে জানায় যে, রিনা আক্তার স্বেচ্ছায় সহকারী শিক্ষিকা পদ থেকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু তারা আমার সেচ্ছায় অব্যাহতির কোন কাগজপত্র আদালতে দেখাতে পারেনি। পরে আদালত আমার নিয়োগপত্র ও যোগদান পত্র সত্য বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে সাক্ষীর ভুল বক্তব্য প্রদানের কারনে আদালত আমার মামলাটি খারিজ করে দেন। যা আমি পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপীল করি এবং তা চলমান রয়েছে।

তিনি সংসারসহ সার্বিকভাবে কঠিন মানবেতর জীবন পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে রিনা আক্তার আরো বলেন, আমলী আদালত তার ও বিবাদীদের দাখিলকৃত কাগজ-পত্র বিচার বিশ্লেষণ না করেই কেবলমাত্র একজন সাক্ষীর ভুল সাক্ষ্য প্রদানের কারনে আদালত তার মামলাটি সঠিক রায় প্রদান না করে মামলাটি খারিজ করে দেন। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না বলে কোলে থাকা বাচ্চাকে নিয়ে কাঁন্নারত কণ্ঠে বর্ণনা করেন।

তাই সর্বশেষ সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জনদরদী প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী’র নিকট ন্যায়বিচার পাবেন এই আশা রেখে উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের নিকট উক্ত সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি সকল দেশবাসীর নিকট আকুল আবেদন করেন।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন গনমাধ্যমের গনমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনসুর রহমান জানান, এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায়ের অপেক্ষায় তাঁরাও আছে। যাই হোক, এই মূহুর্তে আদালতের উপর তাঁর কোন বলার নাই বলে তিনি উল্লেখ করেন।