Home সারাদেশ জামালপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমার জীবনযুদ্ধ জয়……

জামালপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমার জীবনযুদ্ধ জয়……

41

সুমন আদিত্য,জামালপুর প্রতিনিধিঃ জামালপুর পৌরসভার মেয়র আজ মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) হঠাৎ প্রেস ব্রিফিং ডাকলেন।
জামালপুরের সব সাংবাদকরা ছুটে যায় পৌরসভায়। পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু প্রেস ব্রিফিং এ জানালেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমা আক্তারকে পৌরসভায় দেয়া চাকরীটি স্থায়ী হয়েছে। জামালপুরের সাংবাদিকদের সামনে মেয়র তুলে দেন আকলিমা আক্তারের চাকরী স্থায়ী হওয়া নিয়োগপত্রটি।

নিয়োগপত্রটি হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমা আক্তার কেঁদে ফেলেন। মেয়র মহোদয়সহ সকল কাউন্সিলর এবং সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। এই চাকরীটি না হলে হয়তো প্রতিবন্ধী হয়ে সারা জীবন তার পরিশ্রম এবং পড়াশুনা বৃথা যেত এবং জীবনযুদ্ধে হেরে যেতেন। মাননীয় মেয়র আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি তার মাধ্যেমে পূনরায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। বাংলাদেশে মানবিক মেয়র একজনই সেটা ছানোয়ার হোসেন ছানু। সে আজ আমার অভিভাবকও।

জামালপুর পৌরসভার কম্পুপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেনের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে আকলিমা দ্বিতীয়। জন্মের ছয় মাস পর টাইফয়েডে স্বাভাবিক হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার কাছে তিনি হার মানেননি। মায়ের কোলে চড়ে আর হামাগুড়ি দিয়ে অর্জন করেছেন মাস্টার্স ডিগ্রি। পড়ালেখা শেষে চাকরির জন্য যখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তখন আকলিমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন জামালপুরের পৌর মেয়র। পৌরসভার কর আদায় শাখায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেন আকলিমাকে।

জামালপুর পৌরসভার মেয়রের মানবিকতায় চাকরি পেয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হলেন শাররীক প্রতিবন্ধি আকলিমা আক্তার। জানাযায়,নানা প্রতিকূল ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শারীরিক প্রতিবিন্ধী হয়েও আকলিমা আক্তারকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিনিয়ত সে হামাগুড়ি দিয়ে দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেছেন। অসহায় দরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মেধাবী আকলিমা ভেবে ছিলেন সর্ব্বোচ্চ পাঠচুকিয়ে,চাকরি পেয়ে হয়তো তার অসহায় দরিদ্র পিতামাতার দুঃখ কষ্ট ঘুচিয়ে দিবেন একদিন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারী,বেসরকারি বা এনজিও প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন করেও ফল হয়নি। তাই তিনি দীর্ঘদিন বেকার হয়ে ঘরে বসে অসহায়াত্বের প্রহর গুনছিলেন। অবশেষে ২০২১ সালে(১৭ মে) দুপুরে হামগুড়ি দিয়ে জামালপুর পৌর ভবনের দ্বিতল সিঁড়ি বেয়ে মেয়রের কার্যালয়ে উপস্থিত হন আকলিমা আক্তার।

পরে তিনি পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর সামনে গিয়ে একটি চাকরীর আর্জি জানান। তিনি বলেন, মেয়র মহোদয় আমি আকলিমা আক্তার। শারীরিক প্রতিবন্ধি হয়েও মাস্টার্স পাস করেছি। নিয়েছি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। কিন্তু আমি কী আজীবন পরিবারের বোঝা হয়েই থাকবো? আমি বাঁচতে চাই। আমাকে একটা চাকরি দিবেন। আমি ধরতে চাই অসহায় পিতা-মাতা পরিবারের হাল।

মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু তাৎক্ষণিক প্রতিবন্ধী ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে পৌরসভার কম্পিউটার সেকশনে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি অসহায় নারীকে চাকরি দিয়ে নজির বিহিন মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পৌরবাসীর কাছে সুনাম কুড়িয়েছেন পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু। এই ছিল আকলিমার পড়াশুনা,চাকরী পাওয়া ও জীবনযুদ্ধের ইতিহাস।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি পৌরবাসীর আত্মমানবতার সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই পৌর মেয়র হয়েছি। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়! বরং তারা সমাজের একটি অংশ। তাই তাদের অবহেলা করার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন,বর্তমান সরকার প্রধান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ উভয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নানাবিদ কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়,তাদের জন্য বিশেষ ভাতাও চালু করেছেন।

২০২৩ সালে জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু নিজে অভিভাবক হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমার সাথে পৌরসভার দড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজগর আলীর ছেলে ব্যবসায়ী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রাসেল মাহমুদের বিয়ের দায়িত্বটিও পালন করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ২০২৩ সালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জামালপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী আকলিমা আক্তারকে একটি ল্যাপটপ প্রদান করেছিলেন। জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি বিভাগে প্রতিমন্ত্রীর দফতর থেকে আকলিমা আক্তারের পক্ষে ল্যাপটপটি গ্রহণ করেছিলেন।

এভাবে অদম্য আকলিমা আক্তারা কখন হেরে যায় না। জীবনযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মানুষের মাঝে।