Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

166

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের(ইউএনবি) প্রতিনিধি আসিফ আল মামুনের উপর ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধর ও লাঞ্ছনার বিচার চেয়ে মানবনন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ৷

বুধবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়৷ এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি, প্রেস ক্লাব, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানায়৷

মানববন্ধনে দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হাসিব সোহেলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল। তিনি বলেন,’সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানে গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করা৷ আমরা দেখেছি বিগত কয়েকবছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং সেখানে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। তারা জড়িতদের সবাইকে শাস্তি না দিয়ে গুটি কয়েকজনকে শাস্তি দিয়ে দায়মুক্তি নিচ্ছে। শুধু সাংবাদিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন গড়িমসি দেখা যায়। তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা নেয় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সাংবাদিক নির্যাতনকে ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ড বলে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন,’ আমরা একটা ফ্যাসিবাদী সমাজে আছি, যেখানে ভীন্নমতকে সহ্য করা হয়না৷ বর্তমানে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন বেপোরায়া হয়ে উঠেছে৷ তাদের অপকর্ম নিয়ে কেউ কথা বললে তার ওপর চড়াও হচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ফ্যাসিবাদীর নামান্তর। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লোকদেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আদৌ বিচার হবে কিনা তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তবুও আমরা আশা করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে৷

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন,’ছাত্রলীগের অপকর্ম, গেস্টরুম,’গণরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবসময় সাংবাদিকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে৷ তাঁরা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অপকর্ম তুলে ধরেছে, যার কারণে সাংবাদিকরা এখন ছাত্রলীগের টার্গেটে পরিণত হয়েছে৷ সর্বশেষ আসিফ আল মামুনের ওপর ছাত্রললীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতন করেছে৷ আমরা সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে৷ কিন্তু যদি বিচার না হয়, তাহলে ছাত্র ইউনিয়ন দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে৷’

এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস ক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা৷ এসময় তার মানববন্ধনে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায়। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামীতে নতুন কর্মসূচির ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ার দেওয়া হয়৷

প্রসঙ্গত, গত সোমবার(২১ আগস্ট) গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচি শেষে রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ৪৮ এবং ৪৯ ব্যাচের ওপর ‘গেস্টরুম’ চলছিল। গেস্টরুম চলাকালীন ‘বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে’ এমন সন্দেহে নেতাকর্মীরা একজনকে ধাওয়া করে। এসময় তারা ঐ সন্দেহজনক ব্যক্তিকে ‘ধর ধর’ বলে ধাওয়া করায় হলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তখন হলের দোকানে চা খাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ আল মামুন। তিনি মূল ঘটনা জানতে হলের ভিতরে খেলার মাঠের দিকে এগিয়ে আসেন৷ এসময় ‘গেস্টরুমের ভিডিও করতে পারে’ এমন সন্দেহে সাংবাদিক আসিফ আল মামুনকে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ- পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ নাঈম হোসেন ও আমিনুর রহমান সুমন, হৃদয় রায় ও শাফায়েত হোসেন তোহা। এছাড়া উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সারোয়ার শাকিল, উপ-মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদ হাসান, সহ-সম্পাদক রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান, ক্রীড়া বিষয়ক উপ-সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম নিরব, ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ পাল, মীর তাওহীদুল ইসলাম, আলী আক্কাস আলী, মাহীদ ও সীমান্তকে ইন্ধন দিতে দেখা যায়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে পরিচিত।