ডেস্ক রিপোর্ট: জর্ডানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপি আলোচনা সভা ও বহুভাষিক (multilingual) আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একুশের সাজে সজ্জিত আম্মানের আল হুসেন কালচালার সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জর্ডানের মাননীয়শরিফা মিজ হিন্দ নাসের, বিশেষ অতিথি হিসেবে জর্ডানের মান্যবর সিনেটর জনাব জামাল আহমেদ আল সারাইরাহ, গেস্ট অব অনার হিসেবে মিসেস দোদি করিম তাব্বাহঅংশগ্রহণ করেন।অনুষ্ঠানের শুরুতে আম্মানস্থ ডিপ্লোম্যাটিক কোর, জর্ডানের সিনেটর, পার্লামেন্টারিয়ান এবং মাননীয়শরিফামিজ হিন্দনাসেরআল হুসেন কালচালার সেন্টারের মঞ্চে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এর আগে দিবসের কার্যক্রমের প্রথম ভাগে দূতাবাসে মান্যবর রাষ্ট্রদূত মিস নাহিদা সোবহান কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। এসময় ইউক্রেন, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, পানামা, অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ আরো অন্যান্য দেশের কূটনীতিক বৃন্দ, জাতিসংঘ, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, জর্ডানের স্থানীয় নাগরিক এবং জর্ডানে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভার শুরুতেই অনুষ্ঠানের সভাপতি জর্ডানে নিযুক্তবাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মিস নাহিদা সোবহান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শাহাদাৎ বরণকারীতাঁরপরিবারের সদস্যদের প্রতিএবংবায়ান্নসালেরভাষা শহিদদেরপ্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন ভাষা আন্দোলনই আমাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করেছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙ্গালিরা বুঝতে পেরেছিল যে পাকিস্তানি পরিচয়ে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখাসম্ভব নয়। পাকিস্তানের শুরু থেকেই পূর্বপাকিস্তান বঞ্চনার শিকার হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাঙালি বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদএবং প্রধানত ছাত্র সমাজ শুরু থেকেই বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে আন্দোলন করেন। তিনি আরও বলেন বঙ্গবন্ধুর কারনে আজ বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বাঙ্গালির জাতীয় চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। যা কয়েক দশকের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল মাতৃভাষার প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতির দিন।১৯৯৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ UNESCO তে প্রস্তাব পেশ করে ২১ ফেব্রুয়ারি দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনার জন্য। এটি আদায় করতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীগণের অগ্রনী ভূমিকার কথা তিনি স্মরণ করেন।

মহানশহিদদিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওমাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বানী পাঠ করা হয়।

বহুভাষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জর্ডানের মাননীয় শরিফা মিজ হিন্দ নাসের বলেন মাতৃভাষা বাঙ্গালীর ভাষার জন্য আত্মত্যাগ শুধু মাত্র তাদের নিজদের ভাষাই নয় বরং সে সাথে বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে বাংলাদেশের ভাষা শহিদ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, ভাষা বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এটি মানুষের অতীত, ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের সাথে সেতু বন্ধন। এটি যোগাযোগের মৌলিক মাধ্যম। ভাষা একটি জাতীর পরিচয় বহন করে। তাই বিশ্ব যত বেশি বহুভাষাভাষী সংখ্যা বজায় রাখতে পারবে ততই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হবে। তিনি বাংলাদেশ ও জর্ডানের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় ভাষার শিল্প ও সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচনা সমূহ ও উভয় ভাষায় অনুবাদ করার উপর গুরুত্ব দেন।

জর্ডানের মান্যবর সিনেটর জনাব জামাল আহমেদ আল সারাইরাহ বলেন, ভাষা একটি জাতির পরিচয়। এটি জাতিসত্তার ধারক ও বাহক। বাঙ্গালিরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা নিজেদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং সেই ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে চেতনায় ধারন করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরনা পাবে মানুষ। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ ও জর্ডান তাঁদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে ভাষান্তরের মাধ্যমে আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। দূতাবাসের উদ্যেগে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি মান্যবর রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে আম্মানের আল হুসেন কালচালার সেন্টারে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল দূতাবাসসহ জর্ডান ওনেপালের বিভিন্ন শিল্পীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।অনুষ্ঠানে জর্ডানের জাতীয় মিউজিক কনজারভেটরির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে একুশের গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটি বাংলা ও আরবী ভাষায় পরিবেশন করা হয়।