স্টাফ রিপোটার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের বাঁধভাঙ্গা উত্তাল স্রোত দেখে বিদায়লগ্নে তাদের নেতা-মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে । আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, আমাদের মাত্র দুটি গণসমাবেশ অবলোকন করেই বিনাভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। চট্টগ্রামের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্র দেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়, বিএনপির সমাবেশে তাও হয়নি। বিএনপি হাঁকডাক করে মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ফ্লপ সমাবেশ করেছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হাসান মাহমুদের বিরোধিতা করে বলেছেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে লোক সমাগম নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোনে বলেছি, লাখের কাছে লোক হয়েছে। সত্যকে আড়াল করে তো লাভ নেই, সত্য আড়াল করব কেন? বিএনপি ঢাকায় ১০ লক্ষ লোক সমাগম করলে আওয়ামী লীগ ৩০ লক্ষ লোক সমাগম করতে পারবে।‘ ওবায়দুল কাদের সাহেবদের জানা উচিত, জনগণ চিড়িয়াখানার প্রাণী নয়। বিএনপি মানুষ জড়ো করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নয়। বিএনপির এই গণসমাবেশ মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টির জন্য, যা আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। আপনাদের দেড় যুগের দুঃশাসনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে এখন রাজপথে নেমে এসেছে সারাদেশের মানুষ। রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছেন, পথে পথে বাধা। হামলা গ্রেফতার মামলা করছেন। তারপরও গণসমাবেশমুখী কাফেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিড়ামুড়ি নিয়ে দিন-রাত হেঁটে কিংবা ভ্যানে-ট্রলারে করে এসে সমাবেশ মাঠে-ময়দানে, রাস্তায়, ফুটপাথে, গলিতে, ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে একত্রে, এমনকি বাথরুমের পাশে কাটাচ্ছেন হাজারো দেশপ্রমিক জনতা। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য, এদের অবদান-ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আপনারা নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। আপনারা যদি ব্যাপক লোক সমাগম করতে পারেন, তবে নিশিরাতে ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট করতে হয় কেন? ভোটের দুই তিন মাস আগে থেকে বিএনপি’র লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন কেন, অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেন কেন, গুম ও ক্রসফায়ায়ের আশ্রয় নেন কেন?
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বলছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে! আপনি যে রাষ্ট্রনায়ক নন, আপনি যে আওয়ামীনায়ক, আপনার এ কথায় আবারো প্রমাণ করলেন। যারা লুটপাটের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত তাদের দ্বারা অনাহার-অর্ধাহার আর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে এখন আপনি জনগণকে উপদেশ দিচ্ছেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি ও হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে। সামনের দিনে বিদ্যুৎ-গ্যাস দিতে পারবেন না। টাকা দিয়েও খাবার মিলবে না। লুটপাট করে তার রাজভাণ্ডার শেষ। আমদানি করার মতো ডলার নাই। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে ধংস করে এখন বলছেন আদিম যুগে ফিরে যেতে। এতদিন উন্নয়ন উন্নয়ন বাজনা বাজিয়ে দেশের মানুষের কান ঝালা পালা করে এখন জনগণের হাতে হারিকেন আর ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছেন। তাদের উন্নয়ন ভেসে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই। ’৭৪ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিল না। দেশের জনগণ জানে-মানে-বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু প্রমুখ ।