Home জাতীয় ছেলের সামনে বাবাকে গুলি করে হত্যা, ২৪ ঘণ্টায় হয়নি কোনো মামলা

ছেলের সামনে বাবাকে গুলি করে হত্যা, ২৪ ঘণ্টায় হয়নি কোনো মামলা

33

ডেস্ক রিপোর্ট: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রামে গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানের ছোট ছেলে মোহাম্মদ মুজাহিদ। মুজাহিদ এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। বাবাকে গুলি করার প্রত্যক্ষদর্শী সে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুজাহিদ বলে, ‘আমার কাকুরা (চাচা) বাড়ির সামনে মাঠে ঘাস কাটছিল। ওরা (প্রতিপক্ষ) কাকুদের মারে। এ সময় পাশেই আমার আব্বু খেতে কাজ করছিলেন। কাকুদের মারার খবর শুনে আমি আব্বুর কাছে যাই। আমার চোখের সামনেই আব্বুকে গুলি করল ওরা। ওরা ২০-২৫ জন ছিল। সবার হাতেই অস্ত্র ছিল।

এই হত্যার ঘটনাটি ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও এখনো কোন মামলা ভেড়ামারা থানায় এন্ট্রি হয়নি ও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি বলে ‘আমাদের সময় ডটকম’কে ভেড়ামারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার সময় নিশ্চিত করেন।
এদিকে, হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করলে আজ (শনিবার) থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতারা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা লাশ সামনে রেখে বিক্ষোভ করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম এ হুঁশিয়ারি দেন।
এ আগে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চাদগ্রামের মধ্যপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিদ্দিক মন্ডল (৫২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। নিহত সিদ্দিক মন্ডল ভেড়ামারা উপজেলার চাদগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চাদগ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার মৃত ওমর আলী মন্ডলের ছেলে ও একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুজাহিদেরা দুই ভাই। বড় ভাই ফয়সাল রহমান ঢাকায় চাকরি করেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মাঠে কাজ করার সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর আপন তিন ভাই ইউনুচ আলী মণ্ডল (৪৮), খালেক মণ্ডল (৩৯) ও বাদশা মণ্ডল (৩০) ও ভাতিজা কুব্বাত আলীও (৩৩) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে বাদশার অবস্থা গুরুতর। গুলি করার পাশাপাশি তাঁর পায়ে কোপানোও হয়েছে। আহত বাদশা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এবং অন্যরা ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে চাদগ্রাম মধ্যপাড়া মাঠে নিহতের ছোট ভাই বাদশা ঘাস কাটতে যায়। এ সময় মাঠে বাদশাকে একা পেয়ে চাদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাফিজ তপনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি দল রামদা, ছুরি, অস্ত্রসহ লাঠিসোটা দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় বড় ভাই সিদ্দিক মন্ডলসহ অন্যান্যরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। এ সময় তাদের মারধর করা হয়। গুলিতে নিহত হয় সিদ্দিক মন্ডল ।

নিহতের ভাগ্নি শরিফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন গুলি করে আমার মামাকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নিহতের স্বজন আফফান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিদ্দিক মন্ডলকে হত্যা করা হয়েছে। তারা জাসদের রাজনীতি করে এবং তপন চেয়ারম্যানের লোক।
নিহত সিদ্দিকুরের স্ত্রী আফরোজা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীকে তপন চেয়ারম্যান (চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) নিজে অস্ত্রপাতি দিই গুলি করি মাইরিচে। ও ভালো না। ও দাঁড়া থাকি গুলি করাল আমাক স্বামীক। আমি তাঁর ফাঁসি চাই।’
চাঁদগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাফিজ তপন জাসদের রাজনীতি করেন। তাঁর আপন ভাই আবদুল আলীম স্বপন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হাফিজ তপন বলেন, ‘এটা শিখিয়ে দেওয়া কথা। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। তবে প্রকাশ্যে যে ঘটনা ঘটেছে, এটার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। যারাই দোষী, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। তারা যেটা করছে, এটা রাজনৈতিক হীন মানসিকতা। এগুলো বললে হত্যার প্রকৃত বিষয়ের মোড় ঘুরে যাবে।’
চাদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা যুব জোটের সভাপতি ও ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি মো. আব্দুল হাফিজ তপন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেটি ওই গ্রামের পুরাতন ব্যাপার।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান ‘আমাদের সময় ডটকম’কে বলেন, ভেড়ামারা চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চড়পাড়ায় মাঠে ঘাস কাটছিলো সিদ্দিক মন্ডল। এ সময় হঠাৎ করে দুর্বৃত্তরা এসে সিদ্দিক মন্ডলসহ ৫ জনকে এলোপাতারি গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তবরত চিকিৎসক সিদ্দিক মন্ডলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ অন্যান্য আহতরা হলেন চাঁদগ্রামের ওমর মন্ডলের ছেলে ইউনুছ মন্ডল (৪৬), খাল্লেক মন্ডল (৪৪) ও বাদশা মন্ডল (৪৪) ও কোব্বাত মন্ডল নিহতের আপন ভাইসহ ৪ জন আহতদের ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে মন্ডল বংশ ও মালিথা বংশের মধ্যে বিবাদ হয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে পুর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জাসদের নেতাকর্মীরা জড়িত আছে বলে নিহত সিদ্দিক মন্ডলের
পরিবারের পক্ষ থেকে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা দাবি করছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অতি দ্রুত হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করা হবে। ঘাতকদের ধরতে পুলিশি সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনও মুহুর্তে আবার বড় রকম সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে তিনি দাবি করেন ।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ সমর্থিত দুটি গ্রুপ দীর্ঘদিন আধিপত্য বিস্তার করে আসছে ও সংঘর্ষ চলে আসছে। সে সব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দিনে দুপুরে প্রকাশ গুলি বর্ষণ করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রটি দাবি করে।-আমাদের সময়.কম