ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন আজ ৩ এপ্রিল ২০২৪ সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের যাওয়াকে কেন্দ্র করে একটা পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করে এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি চলবে না বলে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে তখন সাধারণ ছাত্ররা সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের বিরুদ্ধে হত্যার বিচোরের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এক পর্যায়ে ছাত্ররা দাবি জানায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আপাত প্রশমিত করে এবং সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের সেফ এক্সিট তৈরি করে। কয়েকদিন আগে ছাত্র লীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পুনরায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে একই দাবি জানায়।
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে অর্জিত ছাত্র রাজনীতিকে শাসক শ্রেণির দলসমূহ কলুষিত করে আসছে। একদিকে রাজনীতির উপর ছাত্র সমাজের বিরূপ ধারণা তৈরি করছে, অন্যদিকে তাদের স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য আদালতকেও ব্যবহার করেছে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলার ঘোষণা দিয়ে। এতোদিন নীরব থেকে কেন ছাত্র লীগ ঘটা করে ক্যাম্পাসে গেল তার কারণ হিসেবে সামনেই বুয়েটে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে সে কথা আমরা জানতে পারি। অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই বুয়েটের এসকল উন্নয়ন প্রকল্পে নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারা নিশ্চিত করতেই ছাত্রলীগের বর্তমান এই তৎপরতা বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আবার হাইকোর্টও যেভাবে রিট হওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যে রকেটের গতিতে ইতিপূর্বে বুয়েট কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার সিদ্ধান্তও জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর মন্তব্যের পরই হাইকোর্টের এই রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার চিত্রকেও আরেকবার দেশের মানুষের সামনে উন্মোচিত করলো। আবার বুয়েট শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ যে রকম ঢালাওভাবে সাম্প্রদায়িক শিবির কিংবা হিজবুত তাহরীর বলে প্রচার চালাচ্ছে তা তাদের পুরানো ঘৃণ্য অপকৌশল ছাড়া কিছুই নয়। শাসক শ্রেণি ও সরকারের অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যেকোন আন্দোলনকেই এইভাবে শিবির বলে ট্যাগ করা বাস্তবে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতিরই অপকৌশল।
২০১০ সালে ক্যম্পাসে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে তৎকালীন বুয়েট শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’র আহ্বায়ককে অমানবিক হামলার শিকার হতে হয়েছিলো। ধারাবাহিক হামলা-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আবরার হত্যাকাণ্ডের অর্ধযুগেরও বেশি সময় আগে থেকেই অন্যান্য বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলো ছাত্রলীগ। বাম প্রগতিশীল রাজনীতির এই শূন্যতা ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের একচ্ছত্র দখলদারিত্বের বলি হতে হয়েছে আবরার ফাহাদকে। আবরার হত্যার পরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে আমরা সেই বিক্ষোভে সর্বাত্মকভাবে অংশ নিই। সেই আন্দোলনের মধ্যে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বিরোধী যে স্পিরিট ছিল আমরা তার সাথে একমত ছিলাম কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা অংশ দাবি তোলেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের। তখনই আমরা বলেছিলাম ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। একটা দীর্ঘসময় ধরে ছাত্ররাজনীতি বলতে সাম্প্রদায়িক ছাত্র শিবিরের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া, ছাত্রদলের সন্ত্রাস এবং ছাত্রলীগের র্যাগিং, দখলদারিত্ব, তোলাবাজি, সীট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, জোরপূর্বক মিছিল-মিটিং এ অংশ নেওয়ানো, গণরুম, গেস্ট রুম ইত্যাদি চলে আসছে। এসব দেখে ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ ছাত্র সমাজের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। যেটা শাসকশ্রেণিই দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরাও শাসকদের এই অপকৌশল বুঝতে না পেরে আপাত সমাধান হিসেবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলেছে। যা বুমেরাং হিসেবে বুয়েটের সংকটকে আরও গভীর করবে।