Home স্বাস্থ্য চোখ ওঠা রোগে আতঙ্কে ডেমরাবাসি

চোখ ওঠা রোগে আতঙ্কে ডেমরাবাসি

33

স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর ডেমরায় ঘরে ঘরে হঠাৎ বাড়ছে চোখ ওঠা রোগ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন ডেমরা এলাবার সাধারণ মানুষ। গত দুইদিন সরজমিনে ডেমরার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শনিবার ও রোববার ডগাইর পূর্ব পাড়া রেনোভা হাসপাতাল,স্টাফ কোয়াটারের ঢালে হলি এইড হাসপাতাল ও আল রাফি হাসপাতাল ,বাশেরপুল মল্লিকা ফেরদৌস হাসপাতাল ,কোনাপাড়ার দি ইসলামিয়া হাসপাতাল ও মেডিহোপ হাসপাতাল ,মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালসহ ডেমরা এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন ই গড়ে দুই থেকে তিনশত রোগী আসছেন চোখ ওঠার চিকিৎসা নিতে।গত এক সপ্তাহে হাজারের বেশি কনজাংটিভাইটিস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রুত পরিবারের অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগই একই পরিবারের সদস্য।একজনের থেকে অন্য জনের সংক্রামন ছড়াচ্ছে।
হলি এইড হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে সরজমিনে দেখা যায়,চোখ ওঠা রোগীর ভিড়। চোখ ওঠা রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী৷ সকালবেলা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীকে চশমা পরে গন্তব্য যেতে দেখা যায়।
ডেমরার ডগাইর এলাকার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম সেজান বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমার চোখ উঠেছে। সারাক্ষণ চোখে জ্বালাপোড়া করে।বামৈল এলাকার বাসিন্দা ও ব্যাংকার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,আমার অফিসের একজনের হয়েছে তার দিকে কয়েকবার তাকানোর পর আমার চোখে একটা ঝাপসা অনুভব হয় তারপরের দিন আমার চোখ উঠে যায়।পরিবারে সুরক্ষার জন্য চশমা ব্যবহার করছি যাতে তারা সংক্রামিত না হয়।
মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শান্ত নুর খান শান্ত বলেন,তিন দিন আগে একজন চোখ ওঠা কর্মী দেখা করতে আসলে তার পরের দিনেই আমার চোখ ওঠে ।ডাক্তারের পরামর্শে দুদিন যাবত চশমা পরে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি ।আজকে কিছুটা ভালো লাগছে। একই কথা জানিয়েছেন ৬৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি কাজী খলিলুর রহমান খলিল।তিনি বলেন,আমার সাথে প্রতিদিনই সংগঠনের প্রয়োজনে দলীয় নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে আসেন। ইতিমধ্যে ১০-১২ জন কর্মী চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।তাদের থেকে প্রথমেই আমি আক্রান্ত হই পরে আমার পুরো পরিবারই এখন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছি।তিনি বলেন,অন্য নেতাকর্মী ও আত্নীয় স্বজন যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্যে চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা বাসায় অবস্থান করছি।অন্যদের বাসায় আসা নিষেধ করেছি।এরুপ থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এই রোগটিকে কনজাংটিভার বলা হয়। তবে এ সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই বেশি পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।চোখের একেবারে বাইরের স্বচ্ছ অংশটির ডাক্তারি নাম ‘কনজাংকটিভা’। ভাইরাসের সংক্রমণে সেখানে তৈরি হয় প্রদাহ, ফুলে যায় চোখের ছোট ছোট রক্তনালি। ফুলে থাকা রক্তনালিগুলোর কারণেই চোখের রং লালচে হয়ে যায়, যেটাকে চোখ ওঠা বা ‘কনজাংকটিভাইটিস’ বলা হয়।
জানা গেছে, চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ায় ডেমরা থানার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়েছে। চাঁদপুর ফার্মেসির মালিক জাকির হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে ফার্মেসিতে প্রচুর চোখ ওঠা রোগী ভিড় করছেন। আক্রান্তের অধিকাংশই ড্রপ নিতে আসছেন।তাই ড্রপ সংকটে ও রয়েছে আমার ফার্মেসীতে।

ডেমরার রেনোভা হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ নুরুল মমিন খান বলেন, ‘প্রতিদিনই চোখ ওঠা বা ‘কনজাংকটিভাইটিস রোগী আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসছে। এক ধরনের ভাইরাস এই রোগের কারণ। এটা সেল্ফ লিমিটিং কন্ডিশন, ৩-৭ দিন থাকে পরে ভালো হয়, চোখ লাল, চুলকানি, সকালে ঘুম থেকে জেগে চোখ আঠালো অনুভব, কেতর, ব্যাথা, এডিনোভাইরাস থেকে হয়, সাধারণত গরম কালেই হয় রোগটি। বরফ সেক ও simple chloramphenicol drop, paracetamol ওষুধ এনাফ, চুলকানির জন্য এন্টি হিস্টামিন খাওয়া যায়।
স্থানীয় সেজান ফার্মেসীর পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,বাতাসের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হওয়ায় একজনের কাছ থেকে আরেকজন খুব সহজেই আক্রান্ত হয়।এ জন্য রোগীকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাইরে গেলে কালো চশমা পরা, পরিষ্কার টিস্যু বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করাসহ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এদিকে ভিড় বেড়েছে ডেমরার চশমার দোকানগুলোতে। চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে চোখ ওঠে সাধারণ মানুষের এমন ভ্রান্ত ধারণা ভিড় জমিয়েছে দোকানে দোকানে। এই সুযোগকে পুঁজি করে মার্কেটের কিছু অসাধু দোকানিরা ১০০ থেকে ২০০ টাকায় চশমা বিক্রি করছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।