Home জাতীয় চাঁদার দাবিতে বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব, গ্রেপ্তার-৪

চাঁদার দাবিতে বাউফলের নওমালা ইউনিয়নে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব, গ্রেপ্তার-৪

452

আহমেদ জালাল : চাঁদার দাবিতে বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারন মানুষের ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত হামলা চালাচ্ছে। ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। চাঁদার দাবিতে সাধারন মানুষকে অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে। নির্ধারিত চাঁদার টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলে তার আর নিস্তার নেই। এই সন্ত্রাসীরা সাধারন মানুষকে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এ যেনো দেখার কেউ নেই। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। সচেতনমহলের প্রশ্ন-এসব সন্ত্রাসী কারা? যাদের অস্ত্রের মহড়ায় জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যারা ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েমের পথে হেঁটে চলছে। কাদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে এরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় গড়ে উঠা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। প্রশাসন চাইলে সবাইকে শনাক্ত করে শাস্তি দিতে পারে। আমরা জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সচেতনমহল বলছেন, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক, তার ক্ষমা নেই। এদেরকে চিহৃিত করা হোক। অপরাধ যেই করুক, তার ক্ষমা নেই। তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই; নেই কোনো রাষ্ট্রীয় পরিচয়। তার একটাই পরিচয় সে অপরাধী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার ১৪ নভেম্বর বিকেলে নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাটের দক্ষিণ পার্শ্বে ব্যাপারি বাড়ির বাসিন্দা আমির বণিক এর পুত্র বেল্লাল বণিক এর বাসায় প্রথমে এলোপাথারিভাবে কুপিয়েছে। পরে আগুন দিয়ে বাসা জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা উল্লাস করতে করতে স্থান ত্যাগ করে। ভুক্তভোগি পরিবার বলছেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেল্লাল বণিকের ঘরে ঢুকে টিভি, ফ্রিজ, শোয়ার খাটসহ বিপুল পরিমাণ আসবাব ভাঙচুর করে। এরপর সেগুলো এক জায়গায় স্তূপ করে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন পানি ঢেলে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইউপি নির্বাচনে বেল্লাল বণিক সাবেক চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থক ছিলেন। এরআগে ১১ নভেম্বর বিকেলে এই সন্ত্রাসীরা বেল্লাল বণিক পরিবারের ৫টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় মোঃ বেল্লাল হোসেনের মা মোসাঃ সেতারা বেগম ২৭ জনকে বিবাদী করে বাউফল থানায় অপরাধ বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আইন ৪ ও ৫ ধারায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলো-বটকাজল গ্রামের মোঃ মঞ্জু খান (৫৩), নওমালা গ্রামের মোঃ করিম হাওলাদার (৩৬), বটকাজল গ্রামের মোঃ ইউনুচ মৃধা (৩৫) ও নিজ বটকাজল গ্রামের মোঃ রবিউল ইসলাম (১৯)। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল মামুন বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সূত্রগুলো বলছে, ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের হাট ডিষ্টিক রোডের দক্ষিণ পার্শ্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আফছার উদ্দিন মৃধার বড় ভাই আঃ খালেক মৃধার বাসায় হামলা চালিয়েছে। ওই বাসায় মো: আফছার উদ্দিন মৃধা থাকা অবস্থায় এহেন জঘন্য হামলা চালানো হয়। তাৎক্ষনিক বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আফসার মৃধাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে। সন্ত্রাসীরা আঃ খালেক মৃধার পরিবারের কাছে চাঁদা চেয়েছে, নইলে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সন্ত্রাসীরা ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে নির্ধারিত চাঁদার টাকা দাবি করে আসছে। পাশাপাশি নানাবিধ অন্যায়-অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের নির্ধারিত চাঁদার টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করলেই ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো চালানো হয় নির্যাতনের স্টীম রোলার। মূলত : নওমালা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কামাল হোসেন বিশ্বাস জয়ী হয়ে তারই পালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। শনিবার (১৩ নভেম্বর)দিবাগত রাতের আধারে ইব্রাহিম মাষ্টারের মাছের ঘেরে বিষপ্রয়োগ করেছে এসব সন্ত্রাসীরা। পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ নিধণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন প্রায় তিন বছর পর্যন্ত পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করে আসছেন। রোববার সকালে ইব্রহিমের স্ত্রী পুকুরে অজু করতে গিয়ে দেখেন পাঙ্গাস, রুই, কাতলা ও মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৃত মাছ পুকুরে ভাসতে দেখেন। ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক হওয়ায় নির্বাচনে জিতে নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত প্রার্থী এডভোকেট কামাল হোসেনের পালিত সন্ত্রাসীরা তার পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মাছ বিনষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আম মামুন বলেন, মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে নিজবটকাজল গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব চৌকিদারের কাছে মোটা অংঙ্কের চাঁদা চেয়েছে সন্ত্রাসীরা। এবং ইউনুস মাষ্টারের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ইউনিয়নের শান্তিপ্রিয় মানুষ হতাশ। এইসব সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঘর-বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার অপকর্মগুলো কী দেখার কেউ নেই?
সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলা-পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে বিজয়ী প্রার্থী এ্যাড. কামাল হোসেন বিশ্বাস জানান, বেল্লাল বণিক তাঁর অনেক কর্মীকে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। তিঁনি তাঁদের নিবৃত্ত করেছিলেন। কিন্তু বেল্লাল নাকি নির্বাচনের পর ফেসবুকে উত্তেজনামূলক স্ট্যাটাস দিয়েছে। এ কারণে তাঁর কিছু বিক্ষুব্ধ কর্মী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আবার ওই সময় তাঁর কর্মীরাই বিক্ষুব্ধ কর্মীদের থামিয়েছেন।
প্রসঙ্গত : গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নওমালা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যাড. কামাল হোসেন বিশ্বাস বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মো. শাহজাদা হাওলাদার পরাজিত হন। কামাল বিশ্বাস জয়ী হওয়ার পর ১১ নভেম্বর বিকেলে বিজয় উল্লাস থেকেই প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে আসছে। এবং বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজিতে সন্ত্রাসীরা মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।