Home সারাদেশ চট্টগ্রামে ৯৯ শতাংশ ভবন নির্মাণে বিধিমালা লঙ্ঘন

চট্টগ্রামে ৯৯ শতাংশ ভবন নির্মাণে বিধিমালা লঙ্ঘন

23

১৩ বছরে কোনো উচ্ছেদ অভিযান নেই

ডেস্ক রিপোর্ট: যথেচ্ছভাবে ইমারত নির্মাণ হচ্ছে। চোখের সামনে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী। নগর পরিকল্পনাবিদেরা এমনই হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) বিধিমালা লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরেজমিনে তদন্ত করে দেখলে দেখা যাবে, ৯৯ শতাংশ ভবনই কোনো না কোনোভাবে বিধিমালা ভঙ্গ করেছে। সড়কের জন্য জায়গা না ছেড়েই নির্মাণ করা হয়েছে ১০-১২ তলা ভবন। বিধিমালায় নির্দেশিত নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। গত প্রায় ১৩ বছর চউক থেকে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে অসংখ্য ভবন নির্মাণের প্ল্যান। প্রস্তাবিত সড়কের জন্য জায়গা না ছেড়েই তৈরি করা হয়েছে শত শত ভবন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষেত্রে জনঘনত্বের বিষয়টি যেমন বিবেচনা করা হয়নি, তেমনি সিটি করপোরেশনসহ ইউটিলিটি সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন চাপ। এরই ফলে গত প্রায় এক যুগে চট্টগ্রাম মহানগরী একদিকে যেমন হারিয়েছে সৌন্দর্য, অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয়েছে আবর্জনাময়, জনচলাচল সুবিধাহীন ইটের বস্তিতে।
দীর্ঘদিন চউক চলেছে একজন সার্বক্ষণিক নগর পরিকল্পনা সংক্রান্ত সদস্য এবং ‘এমইউআরপি’ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ছাড়াই। এ দুটি পদে পদায়নের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি চেয়ে চউক চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিও দেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

চউকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘নগরীতে ভবন নির্মাণে প্রস্তাবিত সড়কের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা না ছেড়ে বিধিমালা লঙ্ঘন করে অসংখ্য ভবন নির্মাণের ঘটনা ঘটেছে। তিন ফুট প্রশস্ত প্রস্তাবিত রাস্তার পাশে যেখানে তিনতলা ভবনের চাইতে অধিক তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের অনুমতি নেই, সেখানে ৯ তলা থেকে ১২ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৬ ফুট প্রশস্ত প্রস্তাবিত রাস্তা রাখতে যেখানে বলা হয়েছে, সেখানে রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে নির্মাণকাজের জমি আলাদা করতে কোনো সীমানা দেওয়াল নির্মাণ দূরে থাক, অনেক ভবনমালিক প্রস্তাবিত রাস্তার জায়গা পর্যন্ত দখল করে বসে আছে। আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিমধ্যে চউকের বিধিমালা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে এরকম ৬০ থেকে ৭০টি ফাইল চিহ্নিত করেছি।
দেখা গেছে, প্রস্তাবিত সড়কের বিষয়টি নিশ্চিত না করে অসৎ উদ্দেশ্যে বিধিমালা লঙ্ঘন করে এসব ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে চউক থেকে। ভবনের প্ল্যান পাশের সময় রাস্তার মূল দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে কি হয়নি—এ বিষয়টিও সরেজমিনে দেখেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলার জন্য চউকের অথরাইজেশন বিভাগ থেকে যেসব নোটিশ জারি করা হয়েছে, তার এক বিশাল পাহাড় জমেছে এখানে। কিন্তু এসব নোটিশ বাস্তবায়নে গত ১৩ বছরে একটিও উচ্ছেদ অভিযান নেই। নগরীতে শুধু ব্যক্তিগত ভবনেই চউক বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে না, উপরন্তু দেখা গেছে নগরীতে যে ২৫টি ডেভেলপার কোম্পানি ভবন নির্মাণের কাজ করছে, তারাও চউকের বিধিমালা, আইন মানছে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব অনিয়ম বন্ধ ও শৃঙ্খলা প্রণয়নে হাত দিয়েছি।’

চউকের বোর্ড সদস্য এবং বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আশিক ইমরান বলেন, ‘১১৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২ থেকে আড়াই লাখ ভবন রয়েছে। সরেজমিনে তদন্ত করে দেখলে দেখা যাবে, এসব ভবনের ৯৯ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে চউকের ২০০৮-২০০৯ বিধিমালা ভঙ্গ করেছে। কেউই বিধি মোতাবেক জায়গা ছাড়ছে না। যারা জায়গা না ছেড়ে ভবন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে চউক আন্তরিক না হলে এই বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না বলে আমি মনে করি।
ইত্তেফাক