Home রাজনীতি আন্দোলনের সতর্ক বিএনপি, আসছে কর্মসূচি

আন্দোলনের সতর্ক বিএনপি, আসছে কর্মসূচি

51

ডেস্ক রিপোর্ট: ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক কৌশলের আর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বিএনপি। ভোলার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে গুলি, হত্যা, নির্যাতন ছাড়াও সারাদেশে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বেড়ে গেলেও সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, গত একমাসে সারা দেশের হামলা মামলা নির্যাতন নিয়ে দল একটি পরিসংখ্যানমূলক রিপোর্ট তৈরি করেছে। তাতে পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে দমানোর চেষ্টা হচ্ছে- এমন বিষয়ই সমানে এসেছে। অন্যদিকে সরকার মুখে অন্য কথা বলছে। বাস্তবে কতটা কঠোর হতে পারে তা হত্যাকান্ডের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে।

গত ৩০ জুলাই ভোলায় এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যাতে পুলিশকে এত কঠোর হয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটার পাশাপাশি ১৫৫টি শটগানের গুলি ও ৩৩টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের গুলিতে তাৎক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ আরেকজন নেতা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মৃতু্যবরণ করেন। এছাড়া গুলিতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। যার মধ্যে গুরুতর আহত ১৯ জন। এত বড় ঘটনার পরও সরকার কোনো তদন্ত টিম গঠন করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি বলে অভিযোগ বিএনপির।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই হামলা ও হত্যাকান্ড পূর্বপরিকল্পিত। সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালিয়ে আবারও প্রমাণ করল- বল প্রয়োগ করে জবরদস্তি করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা মনে করেন, সাম্প্রতিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হত্যার ঘটনা নির্বাচনের দেড় বছর আগেই বিএনপিকে কঠোর আন্দোলনের মাঠে নামানোর কৌশল ক্ষমতাসীনদের। এটি আগামী আন্দোলনে সরকারের অগ্রিম সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। বিরোধী আন্দোলনে সরকার হার্ড লাইনে থাকবে এর ইঙ্গিত।

নীতি নির্ধারণী ফোরামের এসব নেতারা জানান, সরকারের পাতা ফাঁদে না পড়ে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলে সরকারবিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে ধীরে চলো নীতেতে এগুচ্ছেন তারা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা এখনি হরতালের মতো কর্মসূচিতে যেতে চাইলেও হাইকমান্ড তা চাচ্ছেন না। এমনকি কোনো উসকানিতে কেউ যাতে ভুল না করে সেদিকেও সজাগ থাকতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলছেন। যার কারণে জেলা ছাত্রদলের সভাপতিকে হত্যার মতো বড় ঘটনাতেও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে হাঁটছে বিএনপি।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তাই বেশ কিছুদিন থেকেই দল গোছানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই চলতি বছরের মধ্যে মূল দল এবং কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দলীয় ঐক্যের দিকে। তাই বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে ক্ষুব্ধ ও মনঃক্ষুণ্ন হয়ে দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন, এমন জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

সূত্রমতে, বিএনপি নেতারা ভোলার ঘটনাকে সরকারের বিশেষ বার্তা হিসেবে দেখছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে প্রকারান্তরে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে সরকার। যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে মাঠ দখলের সুযোগ দেওয়া হবে না বলে- বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার কতটা কঠোর হতে পারে, তার একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশে উত্তপ্তহীন রাজনীতির মাঠে সরকার নানারকম উসকানিমূলক ঘটনা আরও ঘটাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসে, আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। তাহলেই মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বাচনের আগে ঘরছাড়া করার পথ বের করতে পারবে সরকার। কিন্তু এবার কোন ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। সময় নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক পদ্ধতিতেই কাজ করবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। সেই সময়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে নিতেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে সরকার। ভোলায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করে সরকার প্রমাণ করছে, তারা নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করতে চায়। কিন্তু জনগণের আন্দোলনকে এভাবে নির্যাতন করে স্তব্ধ করা সম্ভব নয়।
যায় যায় দিন